পটিয়া, চট্টগ্রাম: জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির নেতা মোহাম্মদ কায়েছ। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান বলে জানিয়েছেন পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম।
মোহাম্মদ সোহেল হত্যা মামলায় জামিন পাওয়ায় কায়েছ কারাগার থেকে মুক্তি পান।
নিহত মোহাম্মদ সোহেল (৩৮) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএমসিসিআই) সভাপতি এবং কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের ভাগিনা ও পটিয়া উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবুল কাসেমের ছোট ভাই।
জানা যায়, ইউপির নির্বাচনের জের ধরে ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল রাতে পটিয়া উপজেলা কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা বাজার এলাকায় মোহাম্মদ সোহেলকে ছুরিকাঘাতে খুন করে মোহাম্মদ শরিফ। এ ঘটনায় ২৩ এপ্রিল আবুল কাসেম (বর্তমানে বিএনপির মামলায় কারাগারে আছেন) বাদী হয়ে ইউপির নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্ধী চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপির নেতা মোহাম্মদ কায়েছকে প্রধান এবং মোহাম্মদ শরীফ, মোহাম্মদ মনছুর, মোহাম্মদ সুমন, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জসিমুল আনোয়ার খাঁন, মোহাম্মদ আজগর, কায়সার উদ্দিন জনিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার এক দিন পর মোহাম্মদ সোহেলকে ছুরিকাঘাতকারী মোহাম্মদ শরীফকে আটক করে পুলিশ। সে সময় শরীফ রিমান্ডে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এতে শরীফ নিজে একাই ছুরিকাঘাত করে সোহেলকে খুন করেন বলে স্বীকারোক্তি দেন। কিন্তু, তৎকালীন পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম, এসআই সঞ্জয় কুমার ঘোষ, হাবিব ও পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমানের যোগসাজশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার পথেই সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে যাত্রীবাহী বাস থেকে মোহাম্মদ কায়েছকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ ২১ মাস পর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এ ছাড়া, মামলা হতে জসীমুল আনোয়ার খান ও মোহাম্মদ আজগরকে খালাস দেয়া হয়েছে। অন্য আসামীরা জামিন আছেন। মামলার দুই নম্বর আসামী মোহাম্মদ শরীফ দুই বছর ধরে জেলে আছেন।
এ দিকে, আবুল কাসেম জনরোষের শিকারে পড়ে কোন রকম প্রাণে বেঁচে গেলেও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গেল ১৮ আগষ্ট আবুল কাসেম সকালে ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার পর হাজারো বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর টিম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাকে উদ্ধার করে পটিয়া থানায় নিয়ে আসে। সেই দিন পরিষদ থেকে সেনাবাহিনীর টিম তাকে উদ্ধার করে আনার সময় ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা বিভিন্ন গাড়িতে করে মিছিল সহকারে থানায় এসে জড়ো হয়। পুরো দিন বিক্ষুব্ধ জনতা থানার গেইটের বাইরে অবস্থান করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা। সেদিন তার বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে থানায়।
গেল ১৯ আগস্ট আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে বুধপুরা গ্রামের ভুক্তভোগী নুর আয়শা বাদী হয়ে চাঁদাবাজি মামলা এবং পটিয়া মাদ্রাসা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী নুরুল হাসান বাদী হয়ে আরেকটি হত্যা চেষ্টা মামলা করার পর আদালতে নেয়া হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর আবুল কাশেম আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বাড়ি-ঘর, জমি দখলসহ এলাকায় বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।