চট্টগ্রামে কিছুটা কমলেও সারাদেশে চলামান কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনেও করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের সূচক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনায় মারা গেছেন আরও ১০৪ জন।
যশোর: যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে শনাক্ত ২৫০ জন। শনাক্তের হার প্রায় ৩৫ শতাংশ।
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নড়াইল: নড়াইলে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২ জন।
সাতক্ষীরা: গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস ও উপসর্গ নিয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা: খুলনায় করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ছয় জন, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চার জন ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সকালে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ১৩ জনের মধ্যে সাত জনের বাড়ি রাজশাহীতে, একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, তিন জন নাটোর, একজন নওগাঁ ও একজন পাবনার বাসিন্দা। এদের মধ্যে পাঁচ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন। আট জন মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে। করোনায় মারা যাওয়া পাঁচ জনের মধ্যে দুই জনের বাড়ি রাজশাহীতে, দুই জনের বাড়ি নাটোরে ও একজন পাবনায়।
শামীম ইয়াজদানী আরও জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে করোনায় আক্রান্ত ৩৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৩৬৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১১১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৮৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬২ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
পরীক্ষা বিবেচনায় রাজশাহীতে শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৭ দশমিক ২২ শতাংশ।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬১ রোগী ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন ৪৪ জন। এর আগে ৪০৫টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি ছিলেন ৪৬৮ জন। নতুন ভর্তিসহ বর্তমানে মোট চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৭৮ জন।
বগুড়া: বগুড়ায় করোনা রোগীদের সেবায় ২০টি হাইফো-ক্লোন্যাজাল ক্যানোলা প্রদান করেছে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান-(এস আলম)। ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেলে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ৯ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালেরময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় নয় জনের মৃত্যু হয়েছে।
সকালে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মমেক হাসপাতালে নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুই জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে করোনায় আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন।
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলায় মৃত্যু কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন একজন। আক্রান্ত হয়েছেন ২৬২ জন।
ফরিদপুর: ফরিদপুরে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বাকিদের করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।
সকালে ফরিদপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ২৫৬ জন ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ১৭৬ জন, বাকি ৮০ জনের করোনার উপসর্গ রয়েছে।
ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত ১৪৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৩৬। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯৩। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩২৭ জনে দাঁড়াল।
এছাড়াও নওগাঁয় করোনায় ২৪ ঘণ্টায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় করোনার ওয়ার্ডে মারা সাত জন। আর নেত্রকোনার দুর্গাপুরে করোনার উপসর্গ নিয়ে আইনুদ্দিন (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। পরে তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, শনিবার (৩ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ৮ হাজার ২৮০ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৮ জন।
এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হলো ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭২ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ কোটি ৩৮ লাখ ৪৯ হাজার ১৩৩ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ কোটি ৮২ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪৪ জন।