দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ চলছে। এর মধ্যেও কেউ কেউ স্কুল কলেজ খুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রাণঘাতি করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে যারা দাবি তুলেছেন, তাদের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৩ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সংসদ নেতার সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েই স্কুল-কলেজ খুলতে চায় সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার দাবি উঠছে। কিন্তু আসল কথা হলো যাদের বাচ্চারা স্কুল-কলেজে যান, তারাই কিন্তু চাচ্ছেন না এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হোক। যাদের ছেলে-মেয়েরা যায় না, তারাই বেশি কথা বলছেন। আমরা এরই মধ্যে শিক্ষকদের টিকা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদেরও দিয়ে দেবো। স্কুল বন্ধ আছে। কিন্তু পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়। আমরা সংসদ টিভিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের একটু ক্ষতি হচ্ছে। টিকা দিয়েই আমরা স্কুল-কলেজ খুলে দেবো। লেখাপড়া শিখবে। কিন্তু জেনেশুনে এর জন্য একটি শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবো কি না, সেটা চিন্তা করতে হবে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এবতেদায়ি ও কওমি মাদ্রাসা আগামী মাসেও খুলছে না। দেশে করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় তা বাড়ানো হয়।
টিকার জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন, ‘ডোজ পাওয়া নিয়ে কোনো সংকট আর হবে না। টিকা নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ভারতে করোনা মহামারি শুরুর পরে তারা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এখন টিকা এসেছে। ফাইজারের যে টিকা এসেছে সেখানে শ্রমিকদের অগ্রাধিকার থাকবে। মর্ডানা ও সিনোফার্মের টিকা পৌঁছে গেছে। সিনোফার্মের ২০ লাখ টিকা আমরা কিনেছি। অন্যান্য যেখানেই টিকা পাওয়া যাচ্ছে, আমরা যোগাযোগ করছি। ক্রমে আরও টিকা নিয়ে আসবে। বাজেটে আলাদা টাকা রাখা আছে, টিকা নিয়ে সমস্যা হবে না। দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। আর সব টিকা দেয়া হবে বিনা মূল্যে। করোনা পরীক্ষাও বিনা মূল্যে করে দিয়েছি। টিকার ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বাজেটে টিকার জন্য পর্যাপ্ত টাকা রাখা হয়েছে। ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা আমরা বরাদ্দ রেখেছি। এর বাহিরেও ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে রিজার্ভ।’
করোনার সংক্রমণ বাড়ার মধ্যে জনগণের বাড়ি যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণকে গত ঈদে অনুরোধ করলাম, জায়গা ছেড়ে কোথাও যাবেন না। কিন্তু কেউ কেউ শোনেননি। করোনা ছড়িয়ে পড়ল। তখন সবাই শুনলে এমন ছড়াত না, এটাই বাস্তবতা।আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি পাশে দাঁড়াতে। দলের পক্ষ থেকেও মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এমন কোনো খাত নেই, যেখানে আমরা সহযোগিতা করিনি।