চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ক্যাব ও ভোক্তা অধিদপ্তর কমিশন এজেন্টস প্রথা বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা নিত্য পণ্যের বাজারে কমিশন এজন্টেস ও স্লিপ ব্যবসায়ের নামে পুরো দেশকে অস্থির করে তুলেছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থও পাচারের অন্যতম কারণ এ মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়। অবিলম্বে এ ধরনের ফটকা ব্যবসায় বন্ধ না হলে ব্যবসায় বাণিজ্যে শৃংখলা ফেরানো কঠিন হবে।
আজ শনিবার (১০ আগস্ট) সিটির ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার রেয়াজউদ্দীন বাজারে দেশের সংকট ও ক্রান্তিকালীন সময়ে নিত্য পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে ও সিন্ডিকেট কারসাজি বন্ধের দাবিতে বাজারভিত্তিক প্রচারণা কর্মসূচিতে এসব অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
প্রচারণা কর্মসূচিতে বলা হয়, ‘ব্যবসায়-বাণিজ্যে ক্রয়-বিক্রি থাকবে, ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকবে, এটা স্বাভাবিক প্রথা হলেও দীর্ঘ দিন ধরে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যখানে কমিশন এজেন্টস নামে একটি মধ্যস্বত্বভোগী নিত্য পণ্যের বাজারে ঢুকে লাভের একটি বড় অংশ নিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের কমিশন এজেন্টস প্রথা, ডিও/স্লিপ প্রথার কারণে দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে একটি চক্র বিপুল অংক হাতিয়ে নিচ্ছেন। একটা সময় আমদানিকৃত পেয়াঁজ নিয়ে এ চক্রটি সক্রিয় হলেও বর্তমানে আলু, মসলা, সবজিসহ নিত্য পণ্যের অনেকগুলি জায়গায় কোন প্রকার বিনিয়োগ ও বৈধ রশিদ ছাড়া ছাড়াই বিপুল অংক হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ কমিশন এজন্টেস ও স্লিপ প্রথা চলমান থাকার কারণে ব্যবসায় বাণিজ্যে কারসাজি বন্ধ, মধ্যস্বত্বভোগীদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বাজার তদারকিতে গেলেই একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেরা সাধু সাজার চেষ্টা করছেন। আর ক্রয়-বিক্রির রশিদ ছাড়াই শুধুমাত্র একটি চালানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ব্যবসায় করে যাচ্ছেন। আর নিত্য পণ্য নিয়ে কারসাজির পেছনেই এ অদৃশ্য ব্যবসায়ই অন্যতম।’
ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের নেতৃত্বে এ তদারকি অভিযানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজউল্যাহ, জেলার সহকারী পরিচালক নাসরীন আক্তার, সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান, সহকারী পরিচালক রানা দেব নাথ, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব চান্দগাও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহনগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, ক্যাব যুব গ্রুপের রাসেল উদ্দীন, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ইলিয়াছ ভুইয়া, রেয়াজ উদ্দীন বাজার কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক, বণিক কল্যাণ সমিতির দপ্তর সম্পাদক মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাবের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা পুরো ১৬ বছরই বিভিন্ন অজুহাতে নিত্য পণ্য ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন। আইন প্রয়োগে শিথিলতা ও রাজনৈতিক পরিচয় দেখার কারণে বেপরোয়া হয়ে জনগণের পকেট কেটেছেন। বহু জায়গায় পদে পদে ব্যবসায়ীরাও চাঁদাবাজি, আমদানিকারক ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি মূল্যে কেনাসহ বিভিন্ন দোহাই দিয়ে অতি মুনাফায় মগ্ন ছিলেন। একট সময় রাজনৈতিক দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ হওয়ার জন্য লগ্নি করেছেন। যার খেসারত হিসাবে বিগত সরকারের আমলে একটি সুবিধাভোগী চক্র গড়ে উঠেছে; যারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট করে পুরো দেশের মানুষের পকেট কেটে দেশে বিদেশে পাচার করেছেন।’
তারা আরো বলেন, ‘বিনা কারণে ঈদুল আজহার পর থেকে চাল, আলু, কাঁচা মরিচ, পেয়াঁজ, শাক-সবজিসহ নিত্য পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করছেন। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর পর বেশ কয়েক দিন নিত্য পণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে ফের মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বিগত সরকার গুটি কয়েক করপোরেট গ্রুপের কাছে পুরো নিত্য পণ্যের বাজার ছেড়ে দিয়েছিল। এ কারণে ছাত্র-জনতার কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ব্যবসায়ীরা বিগত সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন, যাতে তাদের এ অবৈধ মুনাফায় কোন ধরনের বিচ্ছেদ না ঘটে। তাই, ছাত্র-জনতার এ গণঅভ্যুত্থানকে সফল করতে হলে এসব করপোরেট গ্রুপগুলো বিগত সরকারের আমলে কি পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছে, তার অনুসন্ধান ও তাদের অবৈধ সম্পদের পরিসংখ্যান জাতির কাছে উপস্থাপন করে ঐ সম্পদ রাষ্ট্র মেরামতে বিনিয়োগ করা দরকার। মানুষরূপী এসব দাম সন্ত্রাসীরা যেন সামাজিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করতে না পারেন, সেজন্য সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’