চট্টগ্রাম: খ্যাতিমান ভাষাবিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক ও গবেষক মাহবুবুল হক আর নেই। বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে মাহবুবুল হকের বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। গেল ৭ জুলাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে মরহুমের মৃতদেহ চট্টগ্রাম সিটির লালখানবাজারস্থ বাস ভবনে নেয়ার কথা ছিল। শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে সর্বস্তরের জনগনের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণে নেয়া হবে। বাদ জুমা জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে।
মাহবুবুল হকের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর ফরিদপুরে। তবে শৈশব থেকে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মাহবুবুল হক শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। পরবর্তী চবির বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। মাহবুবুল হক শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রায়োগিক বাংলা ও ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ ও পাঠ্যবই রচনা করে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বাংলা পাঠ্য বইয়ের রচয়িতাও তিনি। আহ্বায়ক হিসেবে নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী ২০১২ ও ২০১৩ শিক্ষা বর্ষের বাংলা শিক্ষাক্রম ও বাংলা পাঠ্যবই প্রণয়নে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে তার। বাংলাদেশ, ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তার লেখা ৪০টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধ সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। এছাড়া, তিনি ২০১৯ সালে ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক, ২০১৬ সালে রশিদ আল ফারুকী পদক এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন।
















