মিরসরাই, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় বহুল আলোচিত পাঁচ বছরের শিশু কাজী মশিউর রহমান প্রকাশ ওয়াসিম খুনের মামলায় এক আসামীর ফাঁসি ও অপর আসামীকে বেকসুর খালাস করে রায় দিয়েছেন আদালত। হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১৪ বছর পর রোববার (৯ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুহাম্মদ রবিউল আউয়াল আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হল কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব। এ সময় আদালত তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডেও দন্ডিত করেন। রায়ে অপর আসামী কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লবকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। আসামীরা পরস্পর সহোদর ভাতা।
রায়ের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন। ৎ
তিনি বলেন, ‘শিশু কাজী মশিউর রহমান প্রকাশ ওয়াসিম খুনের মামলায় এক আসামীর ফাঁসি ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর আসামীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর বিকাল পাঁছটায় মিরসরাইয়ের মঘাদিয়া ইউনিয়নের ভূঁইয়া তালুক কাজী বাড়ির পূর্বপাশের ছনখোলায় আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব ওয়াসিমকে দশ মিনিটের উপরে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করে। এ সময় সিগারেটের আগুনে ছ্যাকা দিয়ে শিশুটির মৃত্যু নিশ্চিত করে। ওই রাতে আসামীর পরিবারের সদস্যরা ছনখোলা থেকে শিশুর লাশকে বস্তাবন্দী করে পাশের ধানক্ষেতে ফেলে দেয়। এ দিকে, শিশুটিকে না পেয়ে শিশুটির জেঠা কাজী একরামুল হক মিরসরাই থানায় পরের দিন ২৩ নভেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ঘটনার পরেদিন শিশুর বস্তাবন্দী লাশ পাশের ধানক্ষেতে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পুলিশ এসে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে শিশু ওয়াসিমের লাশ নিশ্চিত হয়ে ঘটনাস্থল ছনখোলা থেকে আসামীর মোবাইল ও শিশুটির স্যান্ডেল উদ্ধার করে হত্যাকারীকে সনাক্ত করে। শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর মিরসরাই থানায় শিশুটির জেঠা একটি মামলা (নম্বর-২২(১১)১০) করেন। পরবর্তী মামলাটি দায়রা জজ আদালতে দায়রা মামলা (নম্বর-১১২৫/২০১২) মূলে চলমান থাকে। গেল ২৯ মে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব ও কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লবকে জামিন নামঞ্জুর করে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলা চলাকালীন আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব খুনের দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জাবনবন্দি দেন। মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরুতে ৩০২/২০১ দন্ড বিধি ধারায় আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব, তার ভাই কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লব, বাবা ফজলুল কবির প্রকাশ হরমুজ মিয়া ও মা নুর জাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ফজলুল কবির প্রকাশ হরমুজ মিয়া ও নুর জাহান বেগম মারা যান।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট স্বভু প্রসাদ বিশ্বাস ও এডভোকেট মো. মুজিবুর রহমান চৌধুরী (ফারুখ)।
শিশুটির পিতা কাজী মোশাররফ হোসেন বাবলু বলেন, ‘আমার অবুঝ আদরের সন্তান কাজী মশিউর রহমান প্রকাশ ওয়াসিমকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। আমি এ দুই আসামীর মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু, আদালত একজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এ বিষয়ে আমি উচ্চ আদালতে আপীল করব, যাতে ওই আসামিরও সাজা হয়।’
			
		    















