চট্টগ্রাম: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় ৭৮৫টি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, এক হাজার ১৪০টি বিদ্যালয় ও নয়টি মুজিব কিল্লাসহ মোট এক হাজার ৯৩৪টি স্থাপনা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এছাড়া, সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দিয়ে ২৯৫টি মেডিকেল টিম গঠন করেছেন চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়।
শনিবার (২৫ মে) দিবাগত রাতে অনলাইন মাধ্যমে জরুরি সভা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সভায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় জেলার প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন। বিশেষ করে, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও কর্ণফুলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে (ইউএনও) বিশেষভাবে প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেন।
সভায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামে ব্যাপক বর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকায় উপকূলবর্তী এলাকা ও পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাদ্য, মোমবাতি, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন মজুত রয়েছে বলে অবহিত করেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৭৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও এক হাজার ১৪০টি বিদ্যালয় ও নয়টি মুজিব কেল্লা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, খোলা হয়েছে জরুরি কন্ট্রোল রুম। যার নম্বর-০২৩৩৩৩৫৪৮৪৩। এছাড়া, ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০টি, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি, আর্বান ডিসপেন্সারি নয়টি এবং পাঁচটি জেনারেল হাসপাতালসহ মোট ২৯৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য প্রায় তিন লাখ ট্যাবলেট ও চার লাখ খাবার স্যালাইন মজুত রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট ওষুধ, স্যালাইন, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখতে হবে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ইউএইচঅ্যান্ডএফপিওসহ সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হল। দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত এ নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।’
স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। সাপে কাটা রোগীর জন্য অ্যান্টিভেনম মজুত রাখতে হবে। অতি বৃষ্টির কারণে যেন জনগণের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। দুর্যোগ পরবর্তী স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ নিতে হবে।’
সভায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, জনপ্রতিনিধিদের নিজ এলাকায় অবস্থান করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রয়োজনে উপজেলাগুলোতে অবস্থিত ডাকবাংলো ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ সময় জেলার প্রশাসক মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশনা দেন।
জেলা প্রশাসন জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। যার নম্বর -০২৩৩৩৩৫৭৫৪৫।
সভায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, ফায়ার সার্ভিস এবং আনসারসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, উপকূলবর্তী উপজেলাগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন।