চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাক্তার মো. মহিউদ্দিন বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যই সব সুখের মূল। সঠিক পরিমাণ ও সঠিক পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য খেতে না পারায় অপুষ্টির মূল কারণ। আমরা পুষ্টিহীন কাউকে দেখতে চাই না। খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করার ব্যাপারটি প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে পুষ্টিবান সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারটি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা না গেলে ক্যান্সারসহ জঠিল রোগীর সংখ্য বাড়বে। সুস্থ থাকতে হলে প্রত্যেককে পুষ্টি সমৃদ্ধ ও আয়োডিনযুক্ত খাদ্য খেতে হবে। খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে ডিম, দুধ, ফলমূল, শাক-সব্জি ও ডাল জাতীয় শস্য গ্রহণের মাত্রা বাড়াতে হবে। পুষ্টি বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকালে সিটির জিইসি মোড়স্থ ‘দি পেনিনসুলা’ হোটেলের ডালিয়া হলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভাগীয় বহু খাতভিত্তিক রিসোর্স দলের (ডিএমআরটি) সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এডাপ্টিং এ মাল্টিসেক্টরাল এপ্রোচ নিউট্রিশন (আমান) প্রজেক্টের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় এ সভার আয়োজন করে।
সভায় অন্য বক্তারা বলেন, ‘একটি শিশু জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের বুকের শাল দুধ দিতে হবে। শিশুর জন্মের দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাদ্য দিতে হবে। পুষ্টির অভাবে একজন শিশু প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ হতে পারে। পুষ্টি নিয়ে সর্বত্র সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। শিশুকে কিভাবে লালন পালন করতে হবে তা সকলের পূর্বে জানতে হবে মাকে। একজন প্রশিক্ষিত মা-ই পারে একটি শিশুকে সুন্দর করে লালন পালন করতে। আরেকটি ব্যাপার আমাদের মনে রাখতে হবে, মাদক থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। কারণ, আপনি যতই মাদক গ্রহণ করবেন, দিন শেষে ভুক্তভোগী হবে আপনার পরিবার। তাছাড়া, কোন পুষ্টি কাজে লাগবে না আপনি যদি মাদকসেবী হন। চট্টগ্রাম বিভাগের সার্বিক পুষ্টির চিত্র উন্নয়নে স্বাস্থ্য বিভাগসহ অন্যান্য সব সরকারি বিভাগ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালেই পুষ্টি নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। এ লক্ষ্যে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন গঠন করা হয়। ১৯৭৫ সালে গঠন করা হয় জাতীয় পুষ্টি পরিষদ। এমনকি ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদেও পুষ্টি বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। তাই, বহু খাতভিত্তিক পুষ্টির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
বর্তমান সরকার পুষ্টির ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি) ২২টি মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করে, যেগুলো পুষ্টি কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। গর্ভবতী নারীদের পুষ্টি ও মনো-সামাজিক বিকাশের দিকে নজর দিতে হবে। এর মাধ্যমে শিশুদের মস্তিষ্কের সার্বিক গঠন নিশ্চিত করা যাবে। আমরা সরকারি-বেসরকারি খাতসহ সুশীল সমাজের সাথে কাজ করছি, যেন সব মানুষের খাদ্যব্যবস্থার মধ্যে নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণের নিশ্চয়তা অর্জিত হয়। এ জন্য আমরা ভোক্তার দিকেও নজর দিচ্ছি। কেননা, দুর্বল বা পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণহীন খাদ্যাভ্যাস কেবল ব্যক্তির সীমিত আয়ের কারণেই গড়ে ওঠে না। এ বিষয়ে ব্যক্তির অজ্ঞানতা বা অসচেতনতাও বহুলাংশে দায়ী। পাশাপাশি, বাল্যবিবাহ রোধে সর্বত্র জনমত সৃষ্টি করতে হবে।’
বক্তারা বলেন, ‘পুষ্টিবান জাতি গঠনে আমাদেরকে বহু কাজ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে ভোক্তাদের এমনভাবে সমন্বয় ঘটাতে হবে, যেন নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাদ্য সবার জন্য সুলভ করা যায়। সবার সমন্বিত উদ্যোগে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা গেলে পুষ্টিবান জাতি গঠন সম্ভব। দূষিত পানি বা দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা মস্তিস্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা তৈরি করে। এসবের প্রভাব একজন ব্যক্তির ওপর দীর্ঘ মেয়াদী।’
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডাক্তার মোহাম্মদ নওশাদ খানের সঞ্চালনায় সভায় রিসোর্স পারসন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক ডাক্তার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ আজম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) শাহিনা সুলতানা, প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরিচালক একেএম হুমায়ুন কবির, বিএনএনসির পরিচালক ডাক্তার তাহেরুল ইসলাম খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গাজী গোলাম মওলা, প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ও এডাপ্টিং এ মাল্টিসেক্টরাল এপ্রোচ নিউট্রিশন (আমান) প্রজেক্টের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম।
সভার নির্ধারিত বিভিন্ন সেশনে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ ও দ্বিতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) বিষয়ক উপস্থাপনা, বাংলাদেশের বর্তমান পুষ্টি পরিস্থিতি, পুষ্টি নীতি ও কৌশল, বহু খাত ভিত্তিক পুষ্টিকর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন এডাপ্টিং এ মাল্টিসেক্টরাল এপ্রোচ নিউট্রিশন (আমান) প্রজেক্টের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, বিএনএনসির উপ-পরিচালক ডাক্তার জেহান আখতার রানা, উপ-পরিচালক ডাক্তার নুসরাত জাহান, উপ-পরিচালক ডাক্তার আকতার ইমাম ও উপ-পরিচালক ডাক্তার ফারজানা রহমান। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন রাঙাগামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার নুয়েন খীসা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. গোলাম মোরশেদ ও মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া।