চট্টগ্রাম: পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ব্যাঙ প্রাণী হিসেবে বহু ছোট হলেও আওয়াজ বহু বড়। রাজনীতিতেও কিছু পরিত্যক্ত মানুষ আছে, যারা ঘুরে ঘুরে সব দল করে। আর রাজনীতিতে পরিত্যক্ত মানুষগুলোরও ব্যাঙের মত আওয়াজ বড়।’
শনিবার (১১ মে) দুপুরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের নতুন নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক, বিডিআরসিএস ব্যবস্থাপনা পরিষদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও বিশ্ব রেড ক্রস, রেড ক্রিসেন্ট দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম সিটির আন্দরকিল্লাস্থ রেড ক্রিসেন্ট মাঠে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রেড ক্রিসেন্ট জেলা ইউনিটের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান এমইউ কবির চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অনুষ্ঠানে হাছান মাহমুদ আরো বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান মান্না ভাইয়ের একটা বক্তব্য গতকাল পত্রিকায় পড়লাম, পরশু দিন রাতে টেলিভিশনে শুনলাম। সরকারের নাকি একদম ভিত নাই। সরকারের ভিত নাই বিধায় পরপর চার বার আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তারা তো টেনে ফেলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু টান দিতে গিয়ে তারাই ধপাস করে পড়ে গেছে। এখন কোমর যে ভেঙে গেছে, সে অবস্থা থেকে আস্তে আস্তে একটু দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। গেল ২৮ অক্টোবর কার আগে কে দৌড় দেয়, সেই প্রতিযোগিতা আমরা দেখেছি নয়াপল্টনের সামনে।’
পররাষ্ট্রী মন্ত্রী বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান মান্না ভাইসহ আরো কিছু দল ও ব্যক্তি বিশেষ আছে, যাদের নিজের দলের কোন ভিত্তি নাই, ঘুরে ঘুরে দল করে। মান্না ভাই মাশাআল্লাহ এ পর্যন্ত মাত্র সাতটি দল বদল করেছেন। কত দিন জাসদ ভেঙে বাসদ, আবার বাসদ ভেঙে এখন গণতন্ত্র মঞ্চ। সেটি ভেঙে কখন আবার পালিয়ে যান, সেটি বলা যায় না। রাজনীতিতে তারা পরিত্যক্ত ব্যক্তি বিশেষ। এদের কথার কোন দাম নাই।’
তিনি বলেন, ‘তাদের দল ছোট, যখন সমাবেশ করে তাদের মানুষ থাকে ২০-৩০ জন, সাংবাদিক থাকে ৫০ জন, এ নিয়ে তাদের সমাবেশ হয়। কিন্তু গলা বহু বড়, এদের একজন ঢাকা সিটি করপোরেশনে ভোটে দাঁড়িয়েছিল, প্রাপ্ত ভোট দুই হাজার পূর্ণ করতে পারে নাই। কিন্তু, আওয়াজ বহু বড়। আবার টেলিভিশনে দেখা যায় ভলিউমও তাদের একটু বড় থাকে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, পুরো পৃথিবী আজকে সেটির প্রশংসা করছে। জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রশংসা করেন, ভারতের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেন, জার্মান চ্যান্সেলর প্রশংসা করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট প্রশংসা করেন, পুরো পৃথিবী প্রশংসা করে। কিন্তু, বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা এটির প্রশংসা করতে পারে না। আমাদের রাজনীতিতে প্রত্যাখ্যান আর সংঘাতের সংস্কৃতি না থাকলে দেশ আরো বহু দূর এগিয়ে যেতে পারত।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর ৮০ টা দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে বলেছেন, আমাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান। এতে ব্যক্তি বিশেষ রাজনীতির ব্যাঙদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এ জন্য তারা ব্যাঙের মত বেশি বেশি লাফাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দেশ বিনির্মাণে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতের পথচলায় আমাদের দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বাস্থ্য সেবা ও মানবসেবার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে – সেই প্রত্যাশা থাকল।’
স্কুল জীবনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিজেও জুনিয়র রেড ক্রসের সদস্য ছিলেন উল্লখ করে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় ও ক্যাম্পে গিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আমি মনে করি, জীবনের বহু পথ পাড়ি দিয়ে বহু প্রবিন্ধকতাকে ডিঙ্গিয়ে আজকের এ পর্যায়ে আসার ক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্ট ও বয়েজ স্কাউটিং আমার জীবনে বড় ভূমিকা পালন করেছে। দেশের মানব উন্নয়ন সূচক ও স্বাস্থ্য সূচকের উন্নয়নে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সারা বাংলাদেশে অত্যন্ত চমৎকারভাবে কাজ করে চলেছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবাকে আরো উন্নত করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সকলের পূর্বে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কারণ, দেখা যায় যে, সরকারি হাসপাতালে সরকার কিনে দিয়েছে মেশিন, কিন্তু সেই মেশিনের বাক্স খোলা হয় না। আবার মেশিন খোলা হয় ঠিকই, কয় দিন পরে নষ্ট হয়ে যায়, মেরামতের আর উদ্যোগ নেয়া হয় না, যাতে করে মানুষ প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হয়। এগুলো যারা করেন, তারা আসলে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ান, জনগণের বিপক্ষে কাজ করেন। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্য সেবাকে আরো উন্নত করার ক্ষেত্রে ও সহজ-সুলভে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।’
তিনি বলেন, ‘যখন জনগণ এগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে, তখন যারা এ কাজগুলো তাদের পক্ষে করা আর সম্ভবপর হবে না। সরকার কোন যন্ত্র নয়, সরকারও কিন্তু মানুষ দিয়েই চলে। সুতরাং, জনগণ যখন এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলবে সরকারের পক্ষেও এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সহজতর হবে।’