চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলার প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন প্রথমে পাইকারী মার্কেটগুলোতে গিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে সতর্ক করেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বিএসটিআইও এই কাজ করছে। পাইকারী-খুচরা প্রত্যেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়মূল্য টাঙিয়ে রাখার জন্য বার বার নির্দেশনা দেয়ার পরেও তা অমান্য করে চলেছে। গেল দুই দিন পূর্বেও বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এবার অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে জরিমানায় না হলে জেল দেয়া হবে।’
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গেল মাসের খাতওয়ারী অপরাধ চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরো বলেন, ‘কিছু ব্যবসায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য অবৈধভাবে মজুদ ও পণ্যের কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে মূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। পণ্যের দাম না বাড়াতে প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সভা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখাসহ বঙ্গবন্ধু টানেলে দুর্ঘটনা রোধকল্পে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’
সড়কে গাড়ি থামিয়ে যারা চাঁদাবাজি করে তাদের কোন বৈধতা নেই- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নানের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলার প্রশাসক বলেন, ‘ট্রাক ও পণ্য পরিবহণ থামিয়ে সড়কে চাঁদাবাজি চলবে না। পরিবহন শ্রমিকেরা চাঁদা নিলে অফিসে নেবে, সড়কে নয়। যারা চাঁদাবাজি করে, তাদের বিষয়ে পরিবহন নেতারা আনঅফিসিয়ালি নোট দেবেন, ব্যবস্থা নেব। সড়কে চাঁদাবাজি রোধে র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্য কঠোর অবস্থানে থাকবে। হাটহাজারী পৌরসদরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানজট নিরসন ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাত্রী পরিবহণে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দেড়গুণ বা দ্বিগুণ ভাড়া নিলে গাড়ির চালক-সহকারীকে জেল-জরিমানার আওতায় আনা হবে।’
সভায় চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম শফিউল্লাহ বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র উদ্ধারে পুরো বাংলাদেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রথম এবং মাদক উদ্ধার ও সার্বিক মূল্যায়নে দ্বিতীয়। সে জন্য আমাকে পিপিএম পদক দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এটা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ। পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, প্রতিনিধি বা যেই হোক, সড়কে গাড়ি থামিয়ে কোন ধরনের চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। যদি কোন গাড়িতে অবৈধ জিনিস থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নিতে কোন আপত্তি নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘চলতি রমজান ও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, জাল টাকার ব্যবসায় ও চুরি-ছিনতাই রোধে পুলিশ বাহিনী সতর্ক রয়েছে। হাটহাজারী সদরসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সভায় চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের এমওসিএস ডাক্তার মোহাম্মদ নওশাদ খান বলেন, ‘এরমধ্যে ফাইজারের ১৯ হাজার ডোজ করোনা টিকা চট্টগ্রামে এসেছে। এগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে। দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ যে কোন ডোজ হিসেবে এগুলো দেয়া যাবে।’
সভায় বক্তব্য দেন এনএসআইয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. মাজাহরিুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরওয়ার কামাল দুলু, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান, হাটহাজারী পৌরসভার প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, র্যাবের এএসপি মো. নাফি উদ্দিন, ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি হরিপদ চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম মহানগর পিপি এডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম, রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির, বিজিবির সহকারী পরিচালক উপেন্দ্র নাথ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ, পৌর মেয়র, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রতিনিধি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
















