চট্টগ্রাম: চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়েছে সরকার। কিন্তু, দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার চট্টগ্রাম সিটির চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এর কোন প্রভাব নেই। বরং, কমার বদলে ভোজ্যতেলের মূল্য বেড়েছে লিটারে দুই টাকার কাছাকাছি। পেঁয়াজের মূল্যও পূর্বের মতই অস্থির। খুচরা বাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্য কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
কয়েক দিন পূর্বেও যে দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছিল, সেই পেঁয়াজ শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ১০৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ মূল্য ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। পাশাপাশি, বেড়েছে চালের মূল্যও। চিনি পূর্বের মত বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে, কমেছে আলু ও শীতকালীন সবজির দাম।
সরকার কোন পণ্যের মূল্যে শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীরা মিনিটের মধ্যে কার্যকর করে। আর মূল্য কমালে দিনের পর দিনও কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত মূল্য কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত মূল্য বাজারে কার্যকর হয়েছে কিনা, তা দেখারও যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসহায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক-কর ছাড় দিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
প্রজ্ঞাপনে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলে আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিনে পাঁচ টাকা ৬৭ পয়সা কর ভার কমবে। পাম তেলে কেজিতে কর ভার কমবে চার টাকা ৬৬ পয়সা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শুল্ক কমানোর ব্যাপারটি পাত্তা দিতে রাজি নন। মূলত বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে আমদানিকারকরা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকা থেকে ১৭৩ টাকায়। যা নির্বাচনের পূর্বে বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকায়। পাঁচ লিটারের বোতলের মূল্য ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। মূল্য বাড়িয়ে পাঁচ লিটারের বোতল নির্বাচনের পূর্বে বাজারে ছাড়লেও নয়া মূল্যের এক লিটারের সয়াবিন তেল নির্বাচনের পরই বাজারে এসেছে।
এ দিকে, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা বলছেন, ‘গেল বছরের নভেম্বরে ডলারের মূল্য বেড়ে যায়। প্রতি ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২২-১২৪ টাকা হয়ে যায়। ওই সময় (৯ নভেম্বর) ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে এ মূল্য সমন্বয়ের আবেদন করেছিল।
অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে, পূর্বে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, যা পূর্বে ছিল তিন হাজার টাকা।
প্রতি কেজি চিনিতে আমদানিকারকরা গড়ে শুল্ককর দিয়েছেন ৪০ দশমিক ৩৫ টাকা। এখন শুল্ককরে ছাড় দেয়া হয়েছে কেজিতে ৭৫ পয়সা। তাতে নয়া করে চিনি আমদানিতে প্রতি কেজিতে আমদানিকারকদের ৩৯ টাকার বেশি কর দিতে হবে। কিন্তু, চিনি বিক্রি হচ্ছে পূর্বের মতই। প্যাকেটজাত চিনি কেজি ১৪৮ টাকা ও খোলা চিনি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সিদ্ধ ও আতপ চালের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সেই সাথে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। পূর্বে চাল আমদানিতে কেজিতে কর ভার ছিল ৩১ টাকা। এখন তা কেজিতে সাড়ে ২৩ টাকা কমবে। কিন্তু, চালের মূল্যও পূর্বে মত ঊর্ধ্বমুখী।
চালের পাইকারি বাজারখ্যাত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজারে প্রতি বস্তা চালের মূল্য বেড়েছে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। কেজিপ্রতি ৬০ টাকার নিচে কোন চালই পাওয়া যাচ্ছে না। মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাইকারদের। বর্তমানে চালের মূল্য বাড়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই বলেও জানান তারা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। আড়তদাররা বলছেন, ‘মিলাররা মূল্য বাড়িয়ে দিলে আড়তদারদের কিছুই করার থাকে না।’ মূলত জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে স্থিতিশীল থাকলেও নির্বাচনের পর থেকেই চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠে।
চালের আড়তদার শামসুল হক জানান, শুল্কহার প্রত্যাহারের পর এখনো ওই চাল এখনো বাজারে আসেনি। ফলে, বাজারে চালের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। নয়া চাল আমদানি হলে হয়তো চালের মূল্য কমবে।