জুমআর নামাজ পড়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে কুরআনুল কারিমে। জুমআর নামাজের আজান দেয়ার পর কি ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা জীবিকা নির্বাহের জন্য যে কোনো কাজ-কর্ম করা যাবে কি? যদি কেউ আজানের পর ব্যবসা-বাণিজ্য বা কাজ-কর্ম করে তবে কি সে গোনাহগার হবে? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?
কুরআনুল কারিমের ৬২নং সুরা ‘সুরা জুমআ’র ৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়ে ঘোষণা করেন-হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)
এ আয়াতে জুমআর আজান দেয়ার পর পর ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজ-কর্ম ছেড়ে দ্রুত মসজিদের দিকে নামাজ আদায়ে ধাবিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জানার বিষয় হলো-জুমআর আজান হওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যে কোনো কাজ-কর্ম করা যাবে কিনা? এ সময় কোনো কাজ করলে তাতে কি গোনাহ হবে? কেননা অনেক এলাকায় ১২:১৫ তে আজান হয়। আবার কোনো কোনো মসজিদে একবার আজান দিয়ে বাংলা ও আরবি খুতবাহ দেয়া হয়।
আবার কোনো কোনো মসজিদে একবার ১২:১৫ কিংবা সাড়ে ১২টায় আজান দেয়ার পর খুতবার আগে আবারও আজান দেয়া হয়। এতে মুসল্লিদের করণীয়ই বা কী?
‘হ্যাঁ’, কুরআনুল কারিমের নির্দেশনা অনুযায়ী জুমআর আজানের পর নামাজের প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কাজ করা বৈধ নয়; বরং তা গোনাহের কাজ। তাই জুমআর আজান হওয়ার পর নামাজের প্রস্তুতিমূলক কাজ ছাড়া দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবিকা নির্বাহসহ সব কাজ কর্মই বন্ধ করে দেয়া জরুরি।
ইসলামিক স্কলার ও ফিকহবিদদের মতে, উক্ত আয়াতে আহ্বান (আজান) বলতে মৌলিকভাবে দ্বিতীয় আজান (খুতবার আজান) উদ্দেশ্য হলেও শব্দের ব্যাপকতার মাঝে জুমআর প্রথম আজানও অন্তর্ভুক্ত। তাই তাফসীরবিদ ও ফিকহবিদগণের নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী প্রথম আজানের পরও জুমআর প্রস্তুতিমূলক কাজ ব্যতিত ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্য যে কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া উক্ত আয়াতের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। অতএব তা নাজায়েয ও গোনাহের কাজ।
সুতরাং জুমআর জন্য এক আজান দেয়া হোক আর দুই আজান দেয়া হোক; আজানের পর জুমআর নামাজের প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করা বৈধ নয়। এ সময় অন্য কাজ করলে তা গোনাহের কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।
তাছাড়া আল্লাহ তাআলা মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা জীবিকা নির্বাহের ব্যাপারে পরবর্তী (১০নং) আয়াতে সুস্পষ্ট বক্তব্যও তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘অতপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা/ব্যবসা-বাণিজ্য/কাজ-কর্ম) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমআর দিন আজান হয়ে গেলে দুনিয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কোনো কাজ-কর্ম না করে শুধু নামাজের প্রস্তুতি নেয়ার কাজে অংশগ্রহণ করা জরুরি।
আজানের আগের নামাজের প্রস্তুতি সম্পন্ন না হলে আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে যাওয়াই এ আয়াতের নির্দেশনার অন্তর্ভূক্ত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আজান হওয়ার পর যে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।