এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতির শীর্ষ তিনে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। গত ১৫ জুন ২০২১ তারিখ জাতিসংঘের সাসটেনেইবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওর্য়াকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
জতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বের যে তিনটি দেশ এগিয়ে আছে তারমধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের সাসটেনেইবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওর্য়াকের এক প্রতিবেদনে এসডিজি অর্জনে এগিয়ে থাকা বাকী ২ টি দেশ হলো আফগানিস্থান ও আইভেরিকোস্ট।
জাতিসংঘ ২০১৫ সালে এসডিজির মেয়াদ ঘোষণা করে ১৫ বছর। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের উদ্দেশ্য সকল মানুষের জন্য একটি অধিকতর টেকসই ও সুন্দর বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সার্বজনীন ভাবে একগুচ্ছ সমন্বিত কর্মসূচি গৃহিত হয়েছে। এতে ১৭ টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও ১৬৯ টি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এসডিজির এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ। মোট ১৭ টি অভীষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে ১১ টিরই ধারণা দিয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘ এর আগে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) গ্রহণ করেছিল। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশিরভাগ সূচকে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দারিদ্র বিমোচন ,সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বৈষম্য, মাতৃমৃত্যুর হার উন্নয়ন ও শিশু মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল।
এরপর আসে এসডিজি। এসডিজির লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রতা দূর করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুস্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করা ও লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিরোধ অন্যতম।
এসডিজির এবারের সূচকে বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৬৩.৫ শতাংশ। ২০২০ সালে এ স্কোর ছিল ৬৩.২৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে যখন এসডিজি গৃহীত হয় তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৯.১ শতাংশ। বিশ্বের ১৬৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯ তম। এ ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গৃহীত হওয়ার পর থেকে সামগ্রিকভাবে ক্রমোন্নয়নের ধারায় থাকলে ও বিশ্বব্যাপি বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালে প্রথমবারের মত বাধাগ্রস্থ্য হয়ে পড়েছে। কোভিড ১৯ মহামারী কেবল স্বাস্থ্যের জন্য জরুরী পরিস্থিতি সৃষ্টি করে না টেকসই উন্নয়নের সংকট তৈরি করেছে। মহামারীর কারনে দারিদ্রের হার বেড়েছে সেই সঙ্গে বেড়েছে বেকারত্ব। এমনকি সূচকের শীর্ষে থাকা দেশগুলো ও মহামারীর কারনে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির বেশকিছু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে অষ্টম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কার্যকর হবে বলে আশা করি।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে রাষ্ট্র এবং প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি ও পুরস্কার লাভ করে। আভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে ৫০ বছর বাংলাদেশের অর্জন বা প্রাপ্তি অনেক। নিরাপদ বাসস্থান, খাদ্য উদ্বৃত্ত, চিকিৎসাসেবা এবং মৌলিক চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরনের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে এবং বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমাদের মাথাপিছু আয় ২২২৭ মার্কিন ডলারে। রির্জাভ ফান্ড আশাতীত। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। খাদ্যে নির্ভরতা ,রপ্তানি আয়, তথ্যপ্রযুক্তি ও জনশক্তির রেমিটেন্স স্বরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতা অর্জনের সফলতার কথা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ট নেতৃত্বে এবং দূরদর্শীতায় ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন ,২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক: সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ও সভাপতি অর্জন মহিলা উন্নয়ন সংস্থা।