অভ্র বড়ুয়া: সংস্কৃতির সেতুবন্ধন তখনই পূর্ণতা পায়, যখন ভিন্ন দেশের শিল্পী-শিক্ষার্থীরা এক মঞ্চে নিজেদের মেলায় এক সুরে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের মহর্ষি সুশ্রুত হল পরিণত হয়েছিল এক বর্ণিল আন্তর্জাতিক মঞ্চে। ‘স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডাইস্পোরা’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বহুজাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব ‘রিদমস্ অব কালচার-২০২৫’, যেখানে আইসিসিআর স্কলারদের নৃত্য, সংগীত, কবিতা আবৃত্তি ও উপস্থাপনায় ভেসে উঠলো বৈচিত্র্যের এক অপরূপ ঐকতান।
বাংলাদেশ, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ফরাসি দলের শিক্ষার্থীরা একে-একে মঞ্চে এনে দিলেন তাদের স্বদেশের অনবদ্য সুর, রঙ আর ছন্দ। তবে এই বহুরঙা আসরের কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশের উজ্জ্বল উপস্থিতি। প্রাণময় পরিবেশনা, আত্মবিশ্বাসী উপস্থাপনা আর ঐক্যবদ্ধ চেতনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যেন আবারও প্রমাণ করলেন সংস্কৃতির ভাষা সর্বজনীন, অথচ তার রঙে লাল-সবুজ সবসময়ই অনন্য।
বাংলাদেশি দল এই প্রতিযোগিতায় অর্জন করেছে তিন-তিনটি সম্মানজনক পুরস্কার। সংগীত বিভাগে দারুণ কণ্ঠশক্তি ও আবেগময় পরিবেশনার জন্য প্রীতম নন্দী ও মিথিলা স্বদীপ ঘোষ জয় করেছেন প্রথম পুরস্কার। নৃত্য বিভাগে ঐতিহ্যের আবহ আর আধুনিকতার ছন্দ মিলিয়ে অসাধারণ পরিবেশনার জন্য নুখিংমে মারমা, অর্পিতা ত্রিপুরা, প্রযুক্তা চাকমা ও সাহিনুর কামাল তন্নী অর্জন করেছেন প্রথম পুরস্কার। একই বিভাগে সৌন্দর্য ও শৈল্পিকতার মেলবন্ধনে মুগ্ধ করেছেন ফেন্সি ত্রিপুরা, বৈশাখী বসাক, সৌমিতা পাল ও সৃজিতা সাহা; যারা পেয়েছেন দ্বিতীয় রানারআপ সম্মান।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এই সাফল্য কেবল পুরস্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে তাদের উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা ও দর্শকসারিতে প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। তারা শুধু শিল্পী হিসেবেই নয়, দর্শক হিসেবেও ছিলেন সবচেয়ে সক্রিয় ও অনুপ্রেরণাদায়ক।
এই জয় তাই কেবল একটি প্রতিযোগিতার সাফল্য নয়। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, সংগীত ও নৃত্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমানভাবে দীপ্তিমান। প্রবাসের মাটিতে দাঁড়িয়েও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিলেন, শিল্পের শক্তি দিয়ে লাল-সবুজ পতাকা যেমন উড়ে, তেমনি বিশ্বমঞ্চেও উচ্চকণ্ঠে বাজে বাংলাদেশ নামের সুর।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র পরিচালনা বিভাগ, গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত (আইসিসিআর বৃত্তিপ্রাপ্ত)