চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা কোন পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়াইনি। কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও দাড়াঁইনি। আমরা দাড়িঁয়েছি আমাদের সহকর্মীর প্রতি একজন পুলিশ কর্মকর্তার হুমকীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। প্রেস ক্লাব যারা দখল করে নিজেদের হর্তাকর্তা ভাবছেন তাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই এ পরিস্থিতিতে আপনারা আজকে নিরব কেন। যখনই আমাদের অধিকারের প্রশ্ন এসেছে আমরা যুৎবদ্ধভাবে কাজ করেছি। অবিলম্বে পুলিশ কমিশনারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রত্যাহারের উদ্যোগ না দিলে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের নিয়ে সংগ্রামী কর্মসূচি পালন করবে।’
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুর আড়াইটায় নগরীর এসএস খালেদ রোডে সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশেল (সিএমপি) কমিশনারের সাম্প্রতিক হুমকি, বেআইনী ও অশিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণের প্রতিবাদে সিইউজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইউজের যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএফইউজের সহসভাপতি শহীদ উল আলম বলেন, ‘সাংবাদিকরা নিশ্চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকার হয়ে যাবে। প্রকৃত সাংবাদিকদের কোন বন্ধু নেই। সাংবাদিকদের প্রকৃত বন্ধু হচ্ছে জনগণ।’
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা বলেন, ‘সাংবাদিকরা জেগে উঠেছেন। সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করতে রাজপথে এসেছেন। আজকের এ প্রতিবাদী কমর্সূচির মাধ্যমে সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, ‘সিএমপির কমিশনারের প্রতিবাদলিপিকে আমি প্রতিবাদলিপি বলছি না। আমি এটাকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করি। সিএমপির কমিশনার এ ধরনের ভাষায় কথা বলতে পারেন না। আমরা আপনার কাছ থেকে সাংবাদিকতা শিখতে রাজি নই। আমরা আপনার প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে সাংবাদিকতা করি। অবিলম্বে পুলিশ কমিশনারকে তাঁর বেআইনী বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের একটি অংশের নির্লজ্জতার কারণে আজকে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি। এ সুযোগে পুলিশও সাংবাদিকদের উপর চড়াও হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামল বলেন, ‘সাংবাদিকরা রাজপথে নেমেছেন তাদের নিরাপত্তার জন্য। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু সাংবাদিকতার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা আজ পযর্ন্ত নিশ্চিত হয়নি।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি সাইদুল ইসলাম জানান, আমার সহকর্মী যে নিউজ করেছে এতেই অনিয়ম দূর্নীতির যাবতীয় তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের টিভি ইউনিটের প্রধান গাজী টিভির সিনিয়র রিপোর্টার তৌহিদুল আলম বলেন, ‘আমার সহকর্মীর উপর চড়াও হয়ে সাংবাদিকতাকে যারা (সংশ্লিষ্ট পুলিশ) রূদ্ধ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা আজকে রাজপথে দাঁড়িয়েছি।’
টিভি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব একে আজাদ জানান, পুলিশের রোষানলে পড়া সাংবাদিক এমদাদুল হক সাংবাদিকতার যাবতীয় এথিকস মেনেই নিউজটি করেছিলেন। পুলিশের অনিয়মের জায়গায় হাত দিয়েছেন বলেই কমিশনার সাহেবের পক্ষ সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে।’
বিএফইউজের নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রণব বড়ুয়া অর্ণব বলেন, ‘ব্যাটারি রিকসা কেন্দ্রিক পুলিশের সব অনিয়ম ও দুনীর্তির তথ্য সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে।’
মাল্টিমিয়ায় জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আবির আহমেদ বলেন, ‘আজকের এ প্রতিবাদী কর্মসূচী প্রমাণ করে বিপদের সময় সর্বস্তরের সাংবাদিকরা এক ও অভিন্ন থাকি।’
৫ আগস্টের পর আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি তা আগের ধারাতেই চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক চ্যানেল ২৪’-এর প্রতিবেদক এমদাদুল হক বলেন, ‘আমার নিউজে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম-দুনীতির সুষ্পষ্ট তথ্য তুলে ধরার পরও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সিএমপির কমিশনারের হুমকি দেওয়ার ঘটনা খুবই দু:খজনক।’
দৈনিক আমাদের সময়ের ব্যুরো প্রধান হামিদ উল্লাহ বলেন, ‘সাংবাদিকরা যখনই পেশাদারিত্ব দেখাতে চায় তখনই এ ধরনের নির্যাতন নিপীড়ন আমাদের উপর নেমে আসে। পুলিশের ইমেজ এমনিতেই শূন্যের কোটায়। আপনারা দয়া সাংবাদিক নির্যাতনের মতো কাজ করবেন না।’
টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিক আহমেদ সাজিব বলেন, ‘অবিলম্বে সিএমপির কমিশনারের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে।’
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সিইউজের সহ-সভাপতি সম ইব্রাহিম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটির সভাপতি খোরশেদুল আলম, ডেইলি স্টারের ব্যুরো চিফ শিমুল নজরুল, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রুনা আনসারি, একুশে টিভির ব্যুরো চিফ হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম টিভি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্কের আহবায়ক জিয়াদ আহমেদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার সম্পাদক খোরশেদুল আলম, সিইউজের প্রচার সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য আহসান হাবিবুল আলম, সিইউজের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম, সাবেক প্রচার সম্পাদক ইফতেখার ফয়সাল প্রমুখ।