আসিফ মাহমুদ: সমুদ্র সব সময় ছিল রহস্যে মোড়া, তবে সিন্দুর সাগরের গল্প আলাদা। এখানে সূর্যাস্তের সময় পানির রঙ লাল হয়ে যায়, যেন কারও রক্তে রঞ্জিত। মানুষেরা বলে, ওখানে রয়েছে এমন এক ধন, যা কেউ পায়নি, আর যে চেয়েছে, সে ফেরেনি।
আসিফ মাহমুদ নামটি কখনো রাজ দরবারে সম্মান নিয়ে উচ্চারিত হত। একজন দক্ষ তরবারিবাজ, রাজসেনার এক অভিজাত যোদ্ধা। কিন্তু, যুদ্ধ তার হৃদয়ে শুধুই ক্লান্তি আর মৃত্যুর ছবি এঁকেছে। তাই, সব ছেড়েছুড়ে সে চলে যায় সমুদ্রের দিকে- এক নতুন জীবনের খোঁজে।
কিন্তু সমুদ্রও কি সত্যিই মুক্তি দেয়?
চট্টগ্রামের পুরোনো বন্দরে এক দিন এক জীর্ণ নৌকা কিনতে গিয়ে সে খুঁজে পায় একটা কাঠের বাক্স। খুলতেই ভেতর থেকে পড়ে যায় একটা পুরনো মানচিত্র, আর তার সাথে একটা লাল কাপড়ে মোড়ানো পুঁথি। পুঁথিতে লেখা-
‘‘সিন্দুর সাগরের অভিশপ্ত ধন, যার মালিক সেই মৃত্যুর বন্ধু।’’
সেই রাতেই স্বপ্নে দেখা দেয় এক আগুনে পুড়া মুখ, যার চোখ দুটো নিঃসন্দেহে জীবিত মানুষের নয়।
পর দিন সে খোঁজ নেয় পুরনো নাবিকদের কাছে। এক বৃদ্ধ বলে, “ধন আছে ঠিকই, তবে তা পেতে হলে ফিরে যেতে হবে সময়ের আগে- যেখানে জলদস্যুরা মরেও মরে না।’’
কিছু একটা তাকে তাড়া করছে যেন- কৌতূহল, ভয় আর প্রতিশোধ মিলিয়ে।
সে গড়ে তোলে নিজের ছোট একটি দল- তানিয়া, এক রহস্যময় নারী, যার অতীত কুয়াশার চেয়েও বেশি ঘোলাটে। ছোট রাজু, এক কিশোর, যার চোখে ভর করে ক্ষুধা—সমুদ্র দেখার, কিছু করে দেখানোর।
তারা রওনা দেয় সেই অচেনা পথের দিকে। দিনের পর দিন বৃষ্টি, ঝড়, হাঙরের হামলা আর দস্যুদের ফাঁকি দিয়ে এগিয়ে চলে তারা। কিন্তু সিন্দুর সাগর সহজ নয়। এখানে জোয়ার আসে হাড়ে কাঁপুনি ধরানো শব্দে। এখানে রাত মানে শুধু অন্ধকার নয়, মৃতদের কান্নাও শোনা যায় মাঝে মাঝে। এক রাতে রাজু দেখতে পায় সাগরের পানিতে এক জাহাজ ভেসে আছে- কিন্তু সেটি ডুবে গেছে প্রায় ২০০ বছর আগে। সেই জাহাজ, দ্যা ক্রিমসন বোন, এখনো খুঁজে ফিরছে তার হারানো অধিপতি- ইংরেজ ক্যাপ্টেন বার্লো, যার আত্মা এখনও মুক্ত নয়।
দিন যায়, মানুষ হারায়, আস্থা ভাঙে, আবার গড়ে ওঠে। এক সময় তারা পৌঁছে সেই দ্বীপে, যেখানে সূর্য রক্তরঙ হয়ে ওঠে। সেখানে তারা খুঁজে পায় ধন, কিন্তু ধন শুধু স্বর্ণ নয়- এ এক প্রাচীন শক্তি, যা দিয়ে সমুদ্রের স্রোত, জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এক অভিশপ্ত প্রযুক্তি, যা বহু বছর আগে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
আসিফ তখন দ্বিধায় পড়ে- এ ধন কি নিয়ে যাওয়া উচিত?
শেষ পর্যন্ত, অতীতের শিক্ষা থেকে সে সিদ্ধান্ত নেয় ধন ধ্বংস করতে। সমুদ্র কারো নয়, এবং কেউ যেন আর একে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। সে সেই শক্তিকে চিরতরে সমুদ্রে বিলীন করে দেয়।
তানিয়া চলে যায় একা, আর রাজু ফিরে আসে এক নতুন স্বপ্ন নিয়ে।
আসিফ?
সে আবার রওনা দেয় সমুদ্রের পথে- মানচিত্রের এক কোণে ছোট করে লেখা ছিল কিছু…
‘‘যেখানে সাগর নীল নয়, বরং কালো, সেখানেই লুকানো আছে দ্বিতীয় গোপন দরজা।’’
গল্প শেষ হয় না, শুধু দিক বদলায়।
নোট: এই ছিল জলদস্যু আসিফ মাহমুদের প্রথম অভিযান। সমুদ্রের গল্প শেষ হয় না, কারণ সমুদ্র নিজেই তো এক জীবন্ত চরিত্র।