নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী উপজেলায় কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে চরপাথরঘাটার ইছানগর, চরলক্ষ্যা, জুলধ ও শিকলবাহার বহু নিচু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বসতঘর, রাস্তাঘাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সব ডুবে থাকায় শত শত মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। অথচ এই সংকটে স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকাই অনুপস্থিত বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
রোববার (১ জুন) দুপুরে কর্ণফুলী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রয়া ত্রিপুরা শুধুমাত্র শিকলবাহা ও চরপাথরঘাটার প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যান।
তবে তিনি তাৎক্ষণিক কোন জরুরি বরাদ্দ না দিয়ে শুধু সমস্যার বিবরণ শুনে দায় এড়িয়ে যান। বরং দাবি করেন, এসব সমস্যা সমাধান করতে পারে উপজেলা পরিষদ। এ বক্তব্যে স্থানীয়রা আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত রুটিন দায়িত্বে থাকা রয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। কর্ণফুলীর বহু এলাকা পানির নিচে। আমরা কেবল দপ্তরে বসে কাজ করি না, দুর্যোগের মধ্যেও মাঠে নামি। আজও পিআইও অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে এসেছেন। মানুষের কষ্ট অনুধাবন করে আমরা পরিদর্শনে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার মানুষের সমস্যা আমি বুঝতে পেরেছি। উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ পেলে এসব সমস্যা লাঘব করা সম্ভব। সরকারি বরাদ্দ আসলে এ দুটি এলাকা রেকগনাইজ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সংকটের সময় শুধু বক্তব্য আর ভবিষ্যতের আশ্বাস নিয়ে চলে যাওয়া কোনো সমাধান নয়।
শিকলবাহার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম ও ইছানগরের রহিমা বেগম বলেন, ‘ইউএনও এলেও কাউকে শুকনা খাবার, চিকিৎসা বা আশ্রয়ের ব্যবস্থা দেননি। তাঁরা শুধু ভিডিও ও ছবি তুলে পরিস্থিতি দেখে চলে গেছেন। একমাত্র ভরসা ছিল ইউনিয়ন পরিষদ, কিন্তু সেখানে নেতৃত্বশূন্যতা থাকায় কেউই এগিয়ে আসছে না।’
শিকলবাহার সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আজ যদি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থাকতেন, অন্তত শুকনা খাবার, ওষুধ বা শিশুদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করতেন।’
চরপাথরঘাটার খোরশেদ আলম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে রান্না করা যাচ্ছে না, শিশুরা না খেয়ে আছে। অথচ ইউএনও এসে বললেন- উপজেলা পরিষদ এসব সমাধান করতে পারে। তাহলে প্রশ্ন হল- উপজেলা প্রশাসনের দায় কী?’
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতি বছর হাজার হাজার টন চাল, শুকনো খাবার, নগদ অনুদান, গৃহ নির্মাণ সহায়তা, শিশু খাদ্য ও গবাদিপশুর খাদ্য বরাদ্দ থাকে। এসব বরাদ্দ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থাপনায় থাকে। কিন্তু কর্ণফুলীর ক্ষেত্রে কেন তাৎক্ষণিক কোনো সহায়তা আসছে না, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।
ইছানগরের নুর আলী বলেন, ‘বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। দুপুরেও ঘরে খাবার নেই। একে তো জলাবদ্ধতা, তার উপর খাদ্য সংকট। আমাদের কী হবে?’
ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ওয়ার্ড সদস্য রফিক বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা এলেই আমরা কষ্ট পাই। কিন্তু সমাধানে কেউ স্থায়ী উদ্যোগ নেয় না।’
৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সাইদুল হক বলেন, ‘পুরো এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য মাত্র একটি নালা রয়েছে। বহু আগেই ইউএনও অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
সচেতন মহলের দাবি, কর্ণফুলীর মানুষ আজ ভুগছে পানিবন্দি হয়ে- খাদ্যহীন, সেবাহীন। অথচ স্থানীয় প্রশাসন এখনো আশ্বাসের ফাঁদে আটকে রেখেছে মানুষকে। ত্রাণ তৎপরতা, জরুরি সহায়তা ও প্রকৃত প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মোছাম্মৎ জেয়াবুন্নেসা, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী তসলিমা আক্তার, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম মঈন উদ্দিন, ওয়ার্ড সদস্য সাইদুল হক, সাবেক ওয়ার্ড সদস্য মো. রফিক, ব্যবসায়ী নুর আলী।