ঢাকা: বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ব্লকচেইন-সক্ষম, ডিজিটাল প্রোডাক্ট পাসপোর্ট (ডিপিপি) সিস্টেম বাস্তবায়নে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্প শুরু করার জন্য শনিবার (১৭ মে) বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), ডিজিপ্রড পাস লিমিটেড ও ডিজিটাল আর্কিটেক্ট একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে।
ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প স্বচ্ছতা ও সাসটেইনেবিলিটির দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক রেগুলেটরি মানের সাথে সংগতি বজায় রাখতে শিল্পের অটল প্রতিশ্রুতিরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
বিজিএমইএর পক্ষে প্রশাসক আনোয়ার হোসেন, ডিজিপ্রড পাস লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন সোহাগ ও ডিজিটাল আর্কিটেক্ট অ্যান্ড টেকনোভেটিভ সলিউশনস লিমিটেডের পক্ষে সিইও ফাহিম চৌধুরী সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
২৪ মাসের এই পাইলট প্রকল্প চলাকালে বিজিএমইএ নির্বাচিত পোশাক প্রস্তুতকারকদের প্রকল্পে সম্পৃক্ত করে ডেটা সংগ্রহ এবং পৃথক ডেটা উপাদানগুলোকে একীভূতকরণে সহায়তা দেবে। ডিজিপ্রড পাস ডিপিপি প্ল্যাটফর্মের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে, ডিজিটাল আর্কিটেক্ট স্থানীয় প্রযুক্তি অংশীদার হিসাবে পণ্যের জীবন চক্র মূল্যায়ন (এলসিএ), ডেটা সংগ্রহ, সিস্টেম ডেভলপমেন্ট, প্রশিক্ষণ ও একীকরণের মতো পরিষেবাগুলো দেবে।
এই পাইলট প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশী পোশাকের মূল্য চেইন জুড়ে ট্রেসেবিলিটি এবং জবাবদিহিতা বাড়াতে ডিজিটাল প্রোডাক্ট পাসপোর্টের (ডিপিপি) ডিজাইনিং, প্রসার ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করা। ডিপিপি সিস্টেম পণ্যের জীবনচক্র, পরিবেশগত ফুটপ্রিন্ট ও সাসটেইনেবিলিটি পারফরমেন্স সম্পর্কিত, যাচাইকৃত ডেটাগুলো বৈশ্বিক ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে বৈশ্বিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াবে।
পাইলট প্রকল্পটির গুরুত্ব এ কারণেই যে, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের (প্রায় ৬০ শতাংশ) গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপিয় বাজার এবং ইইউ বাংলাদেশের একক সর্ববৃহৎ পোশাক বাজার। এ কারণে ইইউর নিত্যনতুন বিভিন্ন মানদণ্ডের কমপ্লায়েন্সগুলো প্রতিপালন করা বাংলাদেশের জন্য এখন আর ঐচ্ছিক নয়, বরং এটি অপরিহার্য।
ডিপিপি হলো ইইউতে টেকসই পণ্যকে আদর্শ করে তোলার জন্য ২০২৪ সালে ইউরোপিয় পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত ইকোডিজাইন ফর সাসটেইনেবল প্রোডাক্টস রেগুলেশনের (ইএসপিআর) অধীনে একটি বাধ্যতামূলক ইলেকট্রনিক রেকর্ড। ইএসপিআরের বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৬ সালে। এই আইনটি টেক্সটাইল ও পরিবেশের উপর অধিক প্রভাব রাখা অন্যান্য পণ্যগুলোর জন্য ইউরোপিয় ইউনিয়নের বাজারে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল পাসপোর্ট বহন করা বাধ্যতামূলক করবে এবং পাসপোর্টে পণ্যের সাসটেইনেবিলিটি, স্থায়িত্ব ও পরিবেশের উপর প্রভাব রাখার তথ্যগুলো সন্নিবেশিত থাকবে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, বাংলাদেশের জন্য ইউরোপিয় ইউনিয়নের বাজার প্রবেশাধিকার ধরে রাখা এবং ভবিষ্যতে বাজার সুরক্ষিত রাখার জন্য ডিপিপি সিস্টেম গ্রহণ করা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।
এই পাইলট প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিপিপি সিস্টেমের প্রযুক্তিগত ও পরিচালনাগত কার্যকারিতা মূল্যায়ন, সাসটেইনেবিলিটি এবং রেগুলেটরি মান ধরে রাখার জন্য পোশাক উৎপাদনে স্বচ্ছতা এবং ট্রেসেবিলিটি প্রচার করা এবং সিস্টেমের সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করার সময় প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ প্রদান প্রভৃতি।