ঢাকা: গ্রামীণফোনের লিমিটেডের ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নীতিমালা মেনে ও শেয়ারহোল্ডারদের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বুধবার (২৩ এপ্রিল) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এজিএম অনুষ্ঠিত হয়; যা কোম্পানির সামগ্রিক অগ্রগতি ও সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।
এজিএমে গ্রামীণফোনের বোর্ড চেয়ারম্যান হাকন ব্রুয়াসেট কেজোয়েল; প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) অটো মাগনে রিসব্যাক, কোম্পানি সেক্রেটারী এসএম ইমদাদুল হকসহ অন্যান্য বোর্ড সদস্য এবং কোম্পানিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
হাকন ব্রুয়াসেট কেজোয়েল বলেন, ‘গ্রাহকদের পরিবর্তিত চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ২০২৪ সালে গ্রাহককেন্দ্রিক উদ্ভাবনের উপর গুরুত্ব দিয়েছে গ্রামীণফোন। চ্যালেঞ্জিং এই বছরে আমরা বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি এবং ভবিষ্যতের উপযোগী টেলকো-টেক কোম্পানি হওয়ার লক্ষ্যেও দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে ডিজিটাল অগ্রগতি সাধনের প্রতিশ্রুতি ছিল গ্রামীণফোনের অগ্রাধিকার। আমরা বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়াতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি – প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতা ও অনলাইন নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, কানেক্টিভিটি হতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তনের চালিকাশক্তি এবং সেই লক্ষ্যে আমরা একটি টেকসই ও সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিশ্রুতিতে অবিচল।’
ইয়াসির আজমান বলেন, ‘২০২৪ সাল গ্রামীণফোনের জন্য ছিল এক রূপান্তরের বছর। সার্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমরা উদ্ভাবন ও স্থিতিশীলতায় এগিয়েছি। প্রযুক্তির বিকাশ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ এবং গ্রাহক সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা টেলকো-টেক লিডার হওয়ার পথে অগ্রসর হয়েছি। ভবিষ্যৎ উপযোগী নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে মৌলিক সেবাগুলো সমৃদ্ধ এবং গ্রাহককেন্দ্রিক নতুন নতুন সমাধান চালু করেছি আমরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), অ্যানালিটিক্স ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করেছি, যা নতুন পণ্য ও সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছে। ২০২৪ সালে ২৩ লাখ নতুন গ্রাহক আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, ফলে গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪৩ লাখে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখে, যা মোট গ্রাহকের ৫৭ শতাংশ; এর মধ্যে ৪ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক সক্রিয়ভাবে ফোরজি সেবা ব্যবহার করছেন- যা গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সহজ ও উদ্ভাবনী ডেটা প্যাক, বিস্তৃত কনটেন্ট উপভোগের সুবিধা এবং ডিজিটাল সেবা মোবাইল কমিউনিকেশন আয়ে ২৮ শতাংশ অবদান রেখেছে। নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে আমরা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি- যা ভয়েস ও ডেটা সেবার মান আরো উন্নত করেছে। ২ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করে ৩০ শতাংশ ম্যাক্রো সাইট উন্নয়ন এবং ১ হাজার ৭৫৮টিরও বেশি নতুন ফোরজি সাইট স্থাপনের মাধ্যমে ফোরজি কাভারেজ ৯৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করেছি আমরা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছি, আমরা যা ব্যবসায়ের বাইরে গ্রামীণফোনের অবদানের প্রতিফলন। অ্যাপ সিটি, এআই-নির্ভর নেটওয়ার্ক, আইওটি ও ফ্লেক্সি প্ল্যানের মতো উদ্ভাবন আমাদের পরিচালনগত সক্ষমতাকে আরও দৃঢ় করেছে। একইসঙ্গে, একীভূত লাইসেন্স ব্যবস্থার ফলে আমাদের মার্কেট শেয়ার ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। জিপি একাডেমি ও ফিউচার নেশন স্কিল হাবের মাধ্যমে আমরা তরুণদের ক্ষমতায়িত করেছি। ইএসজি মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের ৭২ শতাংশ পার্টনারদের সাথে পার্টনারশিপ কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে সহায়ক, তেমনি সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্টফোন সরবরাহের মতো উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়ন ও ডিজিটাল বৈষম্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে; যা আমাদের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।’
সভায়, পরিচালনা পর্ষদ ২০২৪ সালের জন্য পরিশোধিত মূলধনের ১৭০ শতাংশ হারে চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করেছে, যা প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের শেয়ারের জন্য ১৭ টাকা এবং এটি ওই বছরের কর পরবর্তী মুনাফার ১২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।