চট্টগ্রাম: ডেডলি মাউন্টেন, তুষারধস প্রবণসহ নানা কারণে এভারেস্ট জয় থেকে অন্নপূর্ণা-১ বিজয় অনেক বেশি কঠিন মনে হয়েছে পর্বতারোহী চট্টগ্রামের সন্তান বাবর আলীর কাছে। অন্নপূর্ণা-১ অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলও বলছেন সদ্য আরোহন করে ফেরা বাবর। ভবিষ্যতে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ৮ হাজার মিটারের সব শৃঙ্গে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
স্বপ্ন দেখেছিলেন পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট অন্নপূর্ণা ১ জয়ের। সেই স্বপ্নকে জয় করেই গত ৭ এপ্রিল নেপালে অবস্থিত ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট উচ্চতার এই পর্বত আরোহন চট্টগ্রামের সন্তান ডাক্তার বাবর আলী। বিশ্বের দশম উচ্চতম পর্বত অন্নপূর্ণা-১ (২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট) জয় করে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন পর্বতারোহী বাবর আলী। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল তিনি এই শৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছান এবং ১৫ এপ্রিল বিজয়ীর বেশে দেশে ফেরেন।
এ অসাধারণ সাফল্য উদযাপন এবং জাতীয় পতাকা প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিকতা উপলক্ষ্যে বুধবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রামের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন ও পতাকা প্রত্যর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ক্যাম্প ২ থেকে ক্যাম্প ৩ যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘মনে হবে শত্রুপক্ষের এমন একটা করিডোর দিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে দুই পাশ থেকে মেশিনগান দিয়ে গুলি করছে। আপনি এঁকেবেঁকে যাচ্ছেন, ওপর থেকে পাথর খসে পড়ছে। ফেরার সময় আমার ভারী বুট থাকায় আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। রকফলে পড়েছিলাম।’
বাবর বলেন, ‘অন্নপূর্ণা সামিটে আমাদের দলে চারজন ছিলাম। বাকি তিনজন সামিট করতে পারেনি। একজনকে হেলিকপ্টারে রেসকিউ করতে হয়েছে। আমি ভাগ্যবান। অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছি। প্রথম যিনি এ পর্বত সামিট করেছিল তার হাত পায়ের সব আঙুলের ডগা হারিয়েছিলেন। আমিও খুব সচেতন ছিলাম। এক সময় আমার এ আঙুল খুব কালো হতে শুরু করেছিল। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। ভাগ্য ভালো খারাপ কিছু হয়নি। এ পর্বত খুব তুষারধস প্রবণ। এ বছরটাকে বলা হচ্ছে অন্নপূর্ণার সবচেয়ে ভালো সিজন। কারণ কম পরিমাণে তুষারপাত হয়েছে। আমরা যখন সামিট করছি তখন প্রচুর তুষারপাত শুরু হলো। ঝুঁকি বাড়লো। নীল বরফ ছিল পাথরের চেয়েও শক্ত।’
বাবর বলেন, ‘সমতলের দূষণের প্রতিফলন ঘটছে পর্বতে। নেপালের একটি পর্বতে এখন তুষারই নেই। হ্রদ তৈরি হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বাইরে নয় পর্বত। তরুণদের তিনটি এম- মাসল, মাইন্ডসেট এবং মানি থাকলে পর্বতারোহন সম্ভব। ধাপে ধাপে যেতে হবে। সিঁড়ির কোনো ধাপ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। ধীরে ধীরে এগোতে হবে। পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে সব ধাপ পেরোনো সহজ।’
‘২০২৩ সালে রাজস্থানের এক ছেলে অন্নপূর্ণার তুষার ফাটলে আটকা পড়েছিলেন। তিন দিন আটকা ছিল। তার বেঁচে ফেরাকে মিরাকল বলা হয়।’
বাবর আরও বলেন, ‘অন্নপূর্ণা-১ পর্বতের খাড়া ঢাল, অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া আর তুষারধস প্রবণতার জন্য বিখ্যাত। সবচেয়ে কঠিন অংশ ছিল ক্যাম্প ২ থেকে ক্যাম্প ৩’-এর পথ। ৬ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ৩ নম্বর ক্যাম্প থেকে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মিটার একটানা আরোহন করে পৌঁছাতে হয়েছে চূড়ায়। সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা। ফিরতি পথে সময় লেগেছে আরও নয় ঘণ্টা। সাড়ে ২৬ ঘণ্টার এই সামিট পুশ শরীরের শেষ শক্তিটুকুর পরীক্ষা নিয়েছে। এ মাউন্টেন ছিল ডেডলি। সেই সঙ্গে ছিল তুষার ধস প্রবণ। এভারেস্ট জয় থেকে ও অন্নপূর্ণা ১ আরোহন অনেক বেশি কঠিন।’
এ চুড়ায় ৫ মিনিটের বেশি থাকার সাহস করিনি বলে জানান তিনি।
পৃথিবীতে ৮ হাজার মিটার কিংবা ততোধিক উচ্চতার পর্বত আছে ১৪ টি। ভবিষ্যতে পৃষ্টপোষকতা পেলে সবকটি আট হাজার মিটার শৃঙ্গ লাল-সবুজের পতাকা উড়ানো ও জয়ের আশাবাদ চট্টগ্রামের সন্তান পর্বতারোহী বাবর আলীর।
১৯৫০ সালে প্রথম আট হাজারী পর্বত হিসেবে সামিট হয় অন্নপূর্না। এই ৭৫ বছরে সবগুলো আট হাজার আট হাজার মিটার পর্বত সামিটের কীর্তি আছে সমগ্র বিশের ৭১ জন পর্বতারোহীর।