নীরব চৌধুরী বিটন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
হিমালয়ের আনাচে কানাচে দেখা যায় তাদের। সেই হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুনের দেখা মিল খাগড়াছড়ি শহরের খবংপড়িয়া এলাকার রাস্তায়। আরো একটি পাওয়া যায় সদরের চারমাইল এলাকায়। দুই এলাকা থেকে শকুন দুটো উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি বন বিভাগ।
খাগড়াছড়ি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, এই প্রজাতিটির নাম হিমালয়ান গ্রীফন ভালচার শকুন। উড়তে উড়তে পথ ভুলে বা অসুস্থাতার কারণে পাহাড়ের মাটিতে দেখা গেছে মহাহাবিপন্ন শকুন।
বন বিভাগের কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এক কক্ষে খাবার মাছ-মাংস ও ওরস্যালাইনসহ চিকিৎসা চলচ্ছে। দুটো শকুন থেকে একটি মাটিতে শান্ত অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়।
খাগড়াছড়ি শহরের খবংপড়িয়া বাসিন্দা রিনা চাকমা বলেন, সকাল নয়টা দিকে বাসা থেকে রাস্তায় আসলে দেখি রাস্তার পাশে শকুন এটি পড়ে আছে। বনবিভাগকে খবর দিলে। তারা এসে পাখিটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এই শকুন কোন দিন দেখিনি। দুর-দুরান্তা থেকে অনেক মানুষ দেখতে আসছে পাখি প্রেমীরা।
সুভাশীষ চাকমা বলেন, সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করে খবংপড়িয়ার বিহারের এক রুমে শুকনটি আশ্রয় দেওয়া হয়। পরে বনবিভাগের মানুষরা এসে নিয়ে যান।
খাগড়াছড়ি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবুরাম চাকমা বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর খবংপড়িয়া ও চারমাইল এলাকা থেকে দুইটি হিমালয়ান গ্রীফন ভালচার শকুন উদ্ধার করি। এটি সচারাচর শীতকালিন মৌসুমে চলে আসে। সময় হলে আবার হিমালয়ে চলে যায়। আমাদের পাহাড়ি এলাকায় দেখা যায় না। চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড লাইফ সাথে যোগাযোগ করি। পাখি দুইটির চিকিৎসা অবস্থায় আছে। কিছুটা দুর্বল মন হচ্ছে। দুই এক দিনের মধ্যে সুস্থ হলে নিয়ে যাবে। বনবিভাগের একটি বনপ্রানীর বিভাগ আছে ।
পাখি, বন্যপ্রানী গবেষক ও লেখক শরীফ খান বলেন, এই গ্রীফন প্রজাতির শকুন আমাদের দেশে নেই। এরা শীতের পরিযায়ি পাখি। হিমালয় অঞ্চল থেকে আসে। শীতে আসে তারা খাবার এবং আশ্রয়ের জন্য। বাংলাদেশে এসে খাবার পাই না এবং ওই দেশে ফিরে যেতে পারে না। শরীরের শক্তি হারিয়ে যায়। যখন খাবার পাই না তখন দুর্বল হয়ে তখন গাছে বসলে মাটিতে পড়ে যায়।
বন্যপ্রানী গবেষক ও লেখক শরীফ খান জানান, বাংলাদেশে শকুন নেই। না থাকার কারণ হচ্ছে খাবারের অভাব। অল্প দুই দশটা আছে সিলেটের সীমান্ত এলাকায়। সারাদেশে যদি তাদের খাবার। বাংলাদেশী শকুন নাই অনেক সমস্যা আছে অনেক রকম সংকটে আছে। এর মধ্যে বড় উল্লে যোগ্য হচ্ছে তাদের খাবার নেই। আগে গরু ছাগল মরলে মানুষ খোলা জায়গায় ফেলে রাখত। শতশত শকুন আসত। স্বাস্থ্যা সচেতনের জন্য গরু-ছাগল মারা গেলে মাটি ছাপা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, সিলেট বর্ডার এলাকায় আছে। ওদেরকে বনবিভাগ সপ্তাহে একটা অথবা দুইটি গরু কেটে পেলে রাখে। ওখানে দেশী শকুন খাই। আর এই হিমালয়ান শকুন আসল। এদের জন্য এই ব্যবস্থা নেই। দুই একটি স্থানে বনবিভাগ ব্যবস্থা করেছে। উদ্ধার করা শকুন দুই তিন মাস রেখে খাবার খাওয়ায় আবার সময় হলে অবমুক্ত করে। সঠিক স্থানে চলে যায়।