বাবলু দাশ, হাটহাজারী প্রতিনিধি:
চালের জিলাপী। একটি সুস্বাদু খাদ্য। শীত মৌসুম সাধারণত চালের জিলাপী তৈরির ভর মৌসুম। একটু একটু শীতের আমেজ শুরু হলে এ জাতীয় খাদ্য তৈরির ধুম পড়ে যায়। শীত কালে চালের জিলাপীর প্রধান উপকরণ খামি নষ্ট হয় না।
মোটা চাল মেশিনে গুড়া করে পানি ও লবন দিয়ে মেখে খামি তৈরি করা হয়। অপেক্ষাকৃত গরম মৌসুমে জিলাপীর খামি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রুচিবান খাদ্য পিপাসুরা শীত কালে এ জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করে।
সাধারণত জিলাপী ময়দা দিয়ে তৈরি হয়। ময়দা দিয়ে তেলের মধ্যে ভেজে চিনির সিরার মধ্যে রেখে সাধারণ জিলাপী তৈরি করা হয়। ময়াদার জিলাপী সারা বছরেই তৈরি করা হয়। বিভিন্ন মিষ্টি উৎপাদনকারী কারখানায়। কিন্তু চালের জিলাপী বিষয়টি একটু ব্যতিক্রমী।
চালের খামি মেখে বড় আকারের জিলাপী তৈলের মধ্যে ভেজে একটু মিষ্টির জন্য গুড়ের সিরার মধ্যে ভিজিয়ে চালের জিলাপী তৈরি করা হয়। কবে থেকে চালের জিলাপী তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে তার সঠিক সন্ধান অনেকেই জানে না।
তবে হাটহাজারীর বয়স্কজনদের মতে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী স্বনামধন্য বাজার সরকারহাট বাজার থেকে চালের জিলাপী উৎপাদনের বিষয়টি শুরু হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারহাট বাজারে হোসেন ভাইয়ের জিলাপী নামক এক ভাসমান দোকানদারকে দেখা যাচ্ছে জিলাপী তৈরি করতে। সে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে রাত পযর্ন্ত জিলাপী তৈরি করে থাকেন।প্রতি কেজি জিলাপী ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। জিলাপী তৈরি করে তার সংসার ভাল ভাবে চালাচ্ছে বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
এদিকে এ বাজারে একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান রয়েছে। দোকানটি ঘোষের দোকান হিসাবে থেকে পরিচিত। বাজারের পশ্চিমপার্শ্বে ঘোষদের বসতি। তারা বংশানুক্রমে চা ও মিষ্টির দোকান করে পরিবার পরিজন পরিচালনা করত। তখন চা নাস্তার প্রতি মানুষের এতবেশী আগ্রহ ছিল না আর্থিক সংকটের কারণে।
ঘোষের দোকানে চা নাস্তা প্রত্যাশীদের আকৃষ্ট করতে তারা নিত্য নতুন নাস্তা তৈরি করত। তারাই ধারাবাহিকতায় চালের জিলাপী তৈরির ব্যাবস্থা। কালক্রমে দোকানে চালের জিলাপী তৈরি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।পরবর্তীতে তাদের দোকানের দেখ দেখায় কেউ কেউ বাজারে বসে চালের জিলাপী তৈরি শুরু করেছে। সুস্বাদু খাবার হওয়ায় লোকজন শীত মৌসুমে চালের জিলাপীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
সরকারহাট বাজার থেকে দেখে পাশ্ববর্তী অনেক হাট বাজার এমনকি উপজেলায় ও অনেকেই চালের জিলাপী তৈরির কার্যক্রম শুরু করে। অনেকে অনেক স্থানে চালের জিলাপী তৈরি করলে ও ঐতিহ্য গত কারণে সরকারহাট বাজারের চালের জিলাপী স্বাদ ভিন্ন। তাই সরকারহাট বাজারের চালের জিলাপীর খ্যাতি পুরা চট্টগ্রাম জেলায়। স্বাদের কারণে অনেকে দূরদুরান্ত থেকে শীত মৌসুমে চালের জিলাপী ক্রয় করতে আসে।
অনেকে তাদের প্রবাসী স্বজন ও আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়ার সময় এ বাজার থেকে ক্রয় করে জিলাপী নিয়ে যায়। চাহিদার কারণে বর্তমানে অনেকে সরকারহাট বাজারে চালের জিলাপী তৈরির ব্যবসা শুরু করেছে। এতে করে মানুষের চাহিদা যেমন পুরণ হচ্ছে তেমনি যারা জিলাপী তৈরি করে তারা ও পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে। স্বাবলম্বী পরিবার হয়ে তারা ও সুখে চলছে। শীতকালে মুখরোচক এ খাবার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
















