ঢাকা: সম্প্রতি সরকারি আমলাদের নিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ; যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা মহলে বেশ আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাসপূর্তির দিনে গেল রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) মত বিনিময় সভায় যোগ দিয়ে হাসনাত অভিযোগ করেন যে, ভারত পালিয়ে যাওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে তার ‘অনুগত লোকেরা’ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে নয়া সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। সংবাদ বিবিসি বাংলার।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক দিন সিচ্যুয়েশন ডেভেলপ করে, প্রত্যেক দিন…এখন নেক্সট উইকে যে ক্যু-টা হতে যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে সেক্রেটারিয়েট ক্যু।’
তার এ বক্তব্যের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এক দিকে যেমন ‘সচিবালয়ে ক্যু’ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, তেমনি কেউ কেউ প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছেন। ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনে ফের রাজপথে নামবেন বলেও জানাচ্ছেন অনেকে।
এ দিকে, দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পরেও প্রশাসনিক কাজে খুব একটা গতি ফেরেনি বলে জানাচ্ছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। তাহলে কি সত্যিই অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে প্রশাসনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে?
সচিবালয়ে ক্যুর শঙ্কা প্রকাশ করে দেয়া নিজের যে বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটির ব্যাপারে কথা বলেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘এখানে ক্যু বলতে আমরা বোঝাতে চাচ্ছি যে, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি অংশ অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছে না। যার ফলে, প্রশাসনিক কাজে এক ধরনের স্থিতাবস্থা তৈরি হতে যাচ্ছে।’
মূলত নয়া সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতেই ওইসব আমলারা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করছেন না বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
তিনি আরো বলেন, ‘বিপ্লবী পরবর্তী হিসেবে এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন দৃশ্যমান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়ার পরেও সেই পরিবর্তন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। আর এটি ঘটছে প্রশাসনের ওইসব কর্মকর্তাদের কারণে, যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চাচ্ছে।’
গেল ৮ আগস্ট অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নয়া সরকার শপথ নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন এ সমন্বয়ক।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এরমধ্যে বিচারবিভাগ ও আনসার বাহিনীর ক্যুর চেষ্টা সকলে দেখেছে। প্রতি মুহূর্তেই সরকারকে এ রকম নয়া নয়া ষড়যন্ত্র ফেস করতে হচ্ছে, যার ফলে দেশ গড়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার তৃতীয় দিনের মাথায় ‘ক্যু’ চেষ্টার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এমন পরিস্থিতিতে তখনকার প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারকরা পদত্যাগে বাধ্য হন। ওই ঘটনার পরে প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও বড় রদবদলের দাবি তোলেন আন্দোলনের সমন্বয়করা।
গেল এক মাসে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদল হতে দেখা গেছে। স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নতুন করে বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ করা হয়েছে কয়েক শত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে।
অনেকেই হয়েছেন, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওএসডি), বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পুলিশ মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যানসহ পূর্বের সরকারের চুক্তিভিত্তিক বেশিরভাগ নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি, আধাসরকারি, এমনকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পূর্বের সব কমিশনারসহ কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদ ছাড়ছেন, আবার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, অপমান-অপদস্তসহ বিভিন্ন চাপের মুখে কর্তা ব্যক্তিরা পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদের মুখে সরকারের একজন উপদেষ্টার দায়িত্বেও পরিবর্তন আনতে দেখা গেছে।
সরকারি কাজে গতি আনতে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আরো রদবদল প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রশাসনিক ক্যাডারদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএস) আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ।
তবে, আমলাদের ক্যুর যে আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে, সেটি ঘটনার কোন সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে প্রশাসনের কোন দ্বন্দ্ব নেই বলে জানাচ্ছেন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘কাজে একটু ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, তার মানে এ না যে, প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের কোন ঝামেলা হচ্ছে। তবে, কিছু কর্মকর্তা সরকারকে অসহযোগিতা করছেন।