চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ডিপি ওয়ার্ল্ড নামের বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং রাখাইনে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার গুঞ্জনের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে।
চট্টগ্রাম সিটির মোমিন রোডের বৈঠকখানায় মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ সিদ্ধান্তকে জাতীয় স্বার্থ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং এই সিদ্ধান্ত বাতিলে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এএম নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল- জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এনসিটি ইজারার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার সেই প্রত্যাশা উপেক্ষা করছে।’
তিনি গত ৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘‘প্রতিহত’’ শব্দের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হুমকি দেওয়া গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত অশনিসংকেত।
সভায় বক্তারা জানান, এনসিটি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও কৌশলগত কনটেইনার টার্মিনাল, যা সম্পূর্ণভাবে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এবং বর্তমানে শতভাগ বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে।
তারা বলেন, ‘এনসিটি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দিলে দেশের ৪৫ শতাংশ কনটেইনার পরিচালনার ক্ষমতা বিদেশিদের হাতে চলে যাবে, যা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ। পতেঙ্গা টার্মিনাল ইতোমধ্যেই সৌদি আরবের রেড সী গেটওয়ের হাতে ইজারা দেওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি, বরং টার্মিনালটির সক্ষমতার ১০-১২ শতাংশও ব্যবহার হচ্ছে না। এনসিটির ক্ষেত্রেও একই পরিণতি আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
বক্তারা করিডোর প্রসঙ্গেও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাখাইনে ‘মানবিক সাহায্য’র নামে করিডোর দেওয়ার গুঞ্জনে বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূরাজনৈতিক সংকটে জড়িয়ে পড়তে পারে।’
প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে জনমনে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
বক্তারা ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- এনসিটি ইজারা বাতিল, পতেঙ্গা টার্মিনালের কার্যকারিতা মূল্যায়ন, করিডোর পরিকল্পনা পরিহার এবং কৌশলগত বিষয়ে শ্রমিক ও জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২০- ২৬ জুন পর্যন্ত বন্দর সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ৩০ জুন চট্টগ্রাম বন্দর গেইটে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী নুরুল্লাহ বাহার, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এসকে খোদা তোতন, চট্টগ্রাম স্কপের যুগ্ম সম্পাদক জাহেদ উদ্দিন শাহিন, শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলার নেতা মহিন উদ্দিন, বিএফটিইউসির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক কেএম শহিদুল্লাহ ও বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক বাউ আহাম্মদ ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তপন দত্ত, এএম নাজিম উদ্দিন ও কাজী নুরুল্লাহ বাহার।
















