ঢাকা: যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ত্যাগের মহিমায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব হচ্ছে ঈদুল আযহা যা কোরবানির ঈদ হিসেবেও সমাদৃত। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের আদর্শে উদ্ভাসিত করে আসছে।
শনিবার (৭ জুন) সকালে সারাদেশে মুসল্লিরা নিজ নিজ এলাকার ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন। নামাজের আগে খতিবরা খুতবায় কোরবানির তাৎপর্য তুলে ধরেন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদুল আযহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা ও আশপাশের হাজার হাজার মুসল্লি এই নামাজে অংশ নেন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। নামাজে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদ জামাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যগণ, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেন।
অন্যদিকে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়। এরপর পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় ও পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের নামাজ শেষ করেই পশু জবাই দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরবাসী। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা পশু জবাইয়ে অংশ নিয়েছে। প্রতিবেশীরা একে অপরের গরু জবাই দিতে সহযোগিতা করছেন। বাড়ির সামনের রাস্তায়, গাড়ির গ্যারেজ এবং কেউ কেউ খোলা মাঠে পশু কোরবানি দিচ্ছেন।
ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।
ঈদের পরবর্তী দুই দিন অর্থাৎ আগামী সোমবার আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। কোরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের মাঝে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করতে হয় এবং এক ভাগ নিজের জন্য রাখা যায়।
স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার (৬ জুন) সৌদি আরবে ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়। এদিন সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বেশকিছু গ্রামসহ বিশ্বের বহু দেশে শুক্রবার ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়।
উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল আযহার ১৯৮তম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টায় জামাত শুরু হয়। জামাতে ইমামতি করেন ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। ঈদগাহ ময়দানে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনরা ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের প্রাঙ্গণে ঈদুল আযহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় আয়োজিত জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের খতিব সৈয়দ আলাউদ্দিন আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী। পরে তিনি দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন। একইস্থানে সকাল সাড়ে ৮টায় দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আহমদুল হক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন শাহী জামে মসজিদ, হজরত শেখ ফরিদ (রহ.) চশমা ঈদগাহ মসজিদসহ নগরের বিভিন্ন এলাকাতেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত জামাতে সারা দেশ থেকে মুসল্লিরা অংশ নেন। এই জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা মো. মাহফুজুর রহমান। জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মারুফাত হুসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নেন।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবের আনন্দে ময়মনসিংহে উদযাপিত হয়েছে ঈদুল আযহা। জেলার প্রায় আড়াই হাজার মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের জামাত। সকাল সাড়ে সাতটায় নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল আযহার প্রধান জামাত। এতে ইমামতি করেন আঞ্জুমান ঈদগাহ মসজিদের ইমাম হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন। সকাল সাড়ে আটটায় দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান। ঈদের প্রধান জামাতে অংশগ্রহণ করেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম। তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি এবং মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবে নিহতদের মাগফিরাত কামনা করা হয়।