চট্টগ্রাম: দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ও জাতীয় অগ্রগতির লাইফ লাইন চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার ষড়যন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে চট্টগ্রাম বন্দর ভবন গেটে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন দত্ত। সঞ্চালনা করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার। প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এএম নাজিম উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এসকে খোদা তোতন, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাহেদ উদ্দিন শাহিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নেতা মহিন উদ্দিন, বিএফটিইউসির সাধারণ সম্পাদক কেএম শহিদুল্লাহ, বিএলএফ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ, বন্দর শ্রমিক দলের অন্যতম সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির, ইব্রাহিম খোকন ও ডক শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসেন সেলিম।
সমাবেশ তপন দত্ত বলেন, ‘এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে আধুনিক টার্মিনাল। এই টার্মিনাল কোন দেশী বা বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া যাবে না। সরকারকে আমরা ১৬ জুন পর্যন্ত সময় দিতে চাই। আমরা আশা করবো, এই সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এনসিটি ইজারা দেওয়ার ঘোষণা দিবে। আর যদি প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে ১৭ জুন সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি। গত মঙ্গলবার (২৭ মে) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। স্মারকলিপিতে কেন আমরা এনসিটি ইজারা দেওয়ার বিপক্ষে তার ব্যখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় আমাদের বক্তব্য এসেছে। সুতুরাং, এরপরেও যদি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় না হয়, তাহলে কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হব।
তপন দত্ত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘বন্দর কেবল শ্রমিকদের ইস্যু নয়। এটা একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তাই এই আন্দোলনকে ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।’
তিনি উপস্থিত শ্রমিক কর্মচারীদের বন্দর ইস্যুতে আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
এএম নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার পর কোন সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। বরং দেশীয় ব্যবস্থাপনায় এনসিটি তাদের সক্ষমতার ১৮ শতাংশ বেশী সফলতা দেখিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে সরকার যেন এনসিটি কোন দেশী-বিদেশী মালিকানায় ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করা না হয়।’
তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘সরকার যদি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসুচি দেয়া হলে এবং এর জন্য পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় দায়িত্ব শ্রমিক-কর্মচা্রী ঐক্য পরিষদ নিবে না।’
কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, ‘এখনো ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এনসিটি ইজারা দেওয়া না হলেও তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বন্দরে ঘুরাফিরা করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
তিনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে ডিপি ওয়ার্ল্ডের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন বন্দরে আর দেখা না যায়। বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর নিয়ে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র করা হলে দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’