চট্টগ্রাম: ছয় বছর পূর্বে চট্টগ্রাম সিটির বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে সাংবাদিককন্যা রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের প্রথম মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ কামাল হোসেন শিকদার এ মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
রাইফার পিতা ও মামলাটির বাদী সাংবাদিক রুবেল খানের আইনজীবী ইকবাল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘দণ্ডবিধির ৩০৪ (এ) ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যু ও ১০৯ ধারায় অবহেলার প্ররোচনার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে চার আসামির বিরুদ্ধে।’
অভিযোগ গঠন হওয়ায় মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ জানাতে পারেননি আইনজীবী।
যে চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হল তারা হলেন চিকিৎসক বিধান রায় চৌধুরী, দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও শুভ্র দেব এবং ম্যাক্স হাসপাতালের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী খান।
রুবেল খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৯ জুন আমার মেয়ে মারা যায়। আজ ছয় বছর পর মামলায় অভিযোগ গঠন হল। দেরিতে হলেও আইনি প্রক্রিয়া সঠিকভাবে এগুচ্ছে বলে মনে করি। আমি সুবিচার পাব বলে আশা করি।’
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) শুনানিতে অংশ নেয়া রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডিশনাল পিপি এমএ ফয়েজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে। এখন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।’
এর পূর্বে, গেল ১২ মে চট্টগ্রামের চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার দেয়া অভিযোগপত্রটি আমলে নেন। তার পূর্বে, গেল ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) প্রসিকিউশন শাখায় এ অভিযোগপত্র জমা দেন মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক।
আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক সেদিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘শিশু রাইফার চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।’
২০১৮ সালের ২৮ জুন গলাব্যথা নিয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশু রাইফা পর দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। দুই বছর চার মাস বয়সী রাইফার মৃত্যুর পর ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতি, অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে গড়ে ওঠে আন্দোলন। সাংবাদিকদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ ওই হাসপাতালে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক ও এক নার্সকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। পরে বিএমএর চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার ফয়সাল ইকবাল থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। এরপর চট্টগ্রামের চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা মুখোমুখি অবস্থানে যায়; দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেন। এর মধ্যে র্যাব-৭ ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এক দিন সেবা বন্ধ রাখেন মালিকরা, ফলে ভুগতে হয় রোগীদের। এরপর ওই বছরের ১৮ জুলাই রুবেল খান মামলার আবেদন করেন সিটির চকবাজার থানায়। দুই দিন পর সেই মামলা নেয়া হয়। ওই মামলায় ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী খান, ডাক্তার বিধান রায় চৌধুরী, ডাক্তার দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডাক্তার শুভ্র দেবকে আসামি করা হয়।
২০১৮ সালের ১৪ অগাস্ট হাই কোর্টে একটি রিট মামলা করেন রুবেল খান। ওই মামলার আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি কমিটিও ওই ঘটনার তদন্ত করে। এ কমিটি কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছিল প্রতিবেদনে।