চট্টগ্রাম: সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া জলবায়ু অভিঘাতের ফলে বাস্তুচ্যূত জনগোষ্ঠীর জীবন সংগ্রামের কাহিনী শুনলেন। বাংলাদেশে তার চার দিনের সফরে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) চট্টগ্রাম সিটির পাঁচ নম্বর কালুরঘাটস্থ দক্ষিণ জেলেপাড়া পরিদর্শনকালে এখানকার বাস্তূচ্যূত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাদের জীবনযাপন সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন ও স্থানীয় সফল নারীদের সঙ্গেও কথা বলেন। ইউএনডিপির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে এ সফরকালে তিনি এ দিন চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন ইউএনডিপির প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেন।
জেলেপাড়ায় জলবায়ু অভিঘাতের ফলে বাস্তুচ্যূত জনগোষ্ঠীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিভিন্ন ভাগে প্রকল্পের মাধ্যমে অনুদান দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবসায়ের জন্য ২২ জন, শিক্ষা অনুদানের জন্য ১৪ জন, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণে ১১ জন ও পুষ্টি অনুদানে ১৩ জন উপকারভোগী রয়েছেন।
পরিদর্শনকালে প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত স্থানীয় সফল নারীরা তাদের সফলতার কথা প্রিন্সেসকে শোনান। প্রিন্সেস তাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেন ও উপকারভোগীদের সফলতার প্রশংসা করেন। তিনি তাদের লড়াকু মনোভাবেরও প্রশংসা করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, ইউএনডিপির আন্তর্জাতিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক যোগেশ প্রাধানং এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় নগর দারিদ্র্য হ্রাসকরণ কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রাম সিটির পাঁচ নম্বর কালুরঘাটস্থ দক্ষিণ জেলেপাড়া ওয়ার্ডে এলজিইডি, যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) ও ইউএনডিপির অর্থায়নে এবং চসিকের সহায়তায় জলবায়ু সহিষ্ণু পৌর অবকাঠামো তহবিলের (সিআরএমআইএফ) মাধ্যমে বিভিন্ন জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মিত হয়। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১১৫ দশমিক ৮৫ মিটার রিটেইনিং ওয়াল, ১১৫ দশমিক ৮৫ মিটার ভরাট রাস্তাসহ সিসি রাস্তা, চার দশমিক ৫৭ মিটার স্লুইস গেট, ১৫০টি বৃক্ষরোপণ, ৪৮ দশমিক ৭৮ মিটার ফুটপাত ও ছয় দশমিক দশ মিটার সিড়ি। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৮২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫৮ টাকা, যার মধ্যে চসিকের অনুদান সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ইউএনডিপির অর্থায়ন ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৮ টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে জলবায়ু সহিষ্ণু বাঁধ, কমিউনিটি ল্যাট্রিন, প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তৈরি পেভমেন্ট টাইলস দ্বারা নিমার্ণাধীন ফুটপাত ও কম খরচে জলবায়ু সহিষ্ণু ফেরো সিমেন্ট দিয়ে তৈরি ঘর।
বিকালে প্রিন্সেস সিটির এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন পরিদর্শনে যান। প্রিন্সেস সেখানে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের ‘ইনোভেটিভ ট্রেনিং কোর্সসহ বিভিন্ন কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন ও তাদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। ইউনিভার্সিটিতে তিনি তার নামে নামকরণকৃত ‘ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া রুম’ উদ্বোধন করেন।
এ সময় সাবের হোসেন চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, ইউনিভার্সিটির ভিসি রুবানা হক, চট্টগ্রাম জেলার প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এবং ইউনিভার্সিটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রিন্সেস শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতার ও নৈশভোজে অংশ নেন।
















