সন্দ্বীপ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ইসমাইল হোসেন। তাকে সপ্তাহে দু’দিন সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়। সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতে দেন-দরবার ও ক্ষমতা প্রদশর্নের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছেমতো রেজিস্ট্রি কার্যক্রম পরিচালনা করেন আলোচিত মাহফুজুর রহমান (৪৮)। যা পরবর্তীতে সাব রেজিস্ট্রার ইসমাইল হোসেন থেকে অনুমোদন করিয়ে নেন তিনি।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার পলাতক আসামি মাহফুজুর রহমান। চাকরিজীবনে বিভিন্ন দপ্তরে বিশেষ করে সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুই হাতে টাকা কামানোর কারণে আলোচিত মাহফুজ। তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী হয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করে ইতোমধ্যে দুদকের মামলার আসামিও হয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার আধুনগরে দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার ইসমাইল হোসেন সপ্তাহে দু’দিন সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতে দেন-দরবারের মাধ্যম ও ক্ষমতা দেখিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো রেজিস্ট্রি কার্যক্রম পরিচালনা করেন অফিস সহকারি মাহফুজুর রহমান। যা পরবর্তীতে সাব-রেজিস্ট্রার ইসমাইল হোসেন থেকে অনুমোদন করিয়ে নেন তিনি।
এছাড়া মাহফুজুর রহমান নিজেকে স্থানীয় বিএনপির ক্যাডার দাবি করে বিভিন্ন গ্রাহকদের থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
সন্দ্বীপ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি এখানে খণ্ডকালীন অফিস করি। আমার কাজে কোনো সমস্যা হয় না। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে বলেছেন সেটির ব্যাপারে আমি খোঁজখবর নিব।
এর আগে সম্পত্তি অর্জন ও অর্জনের তথ্য গোপনসহ নানা অভিযোগে মাহফুজের বিরুদ্ধে গত ২ সেপ্টেম্বর মামলা করেছে দুদক। সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এতে মাহফুজের সঙ্গে আসামি করা হয় তার স্ত্রী দিলুয়ারা মাহফুজকেও। মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া থানার উত্তর দেয়াং মোহাম্মদনগর গ্রামে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মাহফুজ দম্পতির এক কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৭৪৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তারা দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২১ টাকা মূল্যের সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করেছেন। মামলায় দুদক আইনের ২৬(২), ২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।
দুদক জানায়, ২০২২ সালে দুদকে জমা হওয়া এক অভিযোগ অনুসন্ধান করে মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পান অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। এরপর কমিশনের নির্দেশে ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন দিলুয়ারা মাহফুজ। পরে তার সম্পদ বিবরণী যাচাই করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের সত্যতা পায় দুদক। দিলুয়ারা মাহফুজের এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনে তার স্বামী মাহফুজুর রহমান সহযোগিতা করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এ নিয়ে জানতে অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া খুদে ভার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ওই কর্মচারী দুর্নীতি করে টাকা অর্জন করেছেন এবং এগুলো এখন নিরাপদে ভোগ করছেন। এই ভোগ করতে দেওয়াও এক ধরনের অপরাধ। দুদকের উচিত ছিল তাকে কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার এবং তার সম্পদ ক্রোকের আবেদন করা। কারও বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে মামলা রুজু হওয়া মানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত অথবা অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীর জামিন নেওয়া দরকার ছিল। দুর্নীতি মামলায় পলাতক আসামিকে সরকারি দপ্তরে অফিস করতে দেওয়া বেআইনি। সেখানে তিনি আরও সদর কার্যালয়ে বদলির চেষ্টা করছেন। এখানে এসে তো তিনি আরও বেশি দুর্নীতি করবেন।— যোগ করেন তিনি।