রিয়াদ হোসেন, আনোয়ারা প্রতিনিধি: করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় আনোয়ারা উপজেলায় অষ্টম দিনের মতো পালিত হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। করোনার সংক্রমণ রোধকল্পে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছেন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। লকডাউনের শুরু থেকেই বিভিন্ন স্থানে তাদের টহল দিতে দেখা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্টে তল্লাশি চালিয়েছে।
শুরুর সাতদিন কড়াকড়ি ও ঢিলেঢালা লকডাউন পালন হয়েছে। প্রথম সপ্তাহের তুলনায় সপ্তম অষ্টম দিনে ছিলো কড়াকড়ি ।তবে জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করেছে মানুষ ও গাড়ি।
কিন্তু অষ্টম দিনে অনেকটা ঢিলেঢালার মতো পালন হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। লকডাউন বাস্তবায়নে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তৎপরতা চালিয়েছেন পুলিশ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে অবাধে চলাফেরা করছে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা। জরুরি সেবা ছাড়াও প্রাইভেটগাড়ি সারি চোখে পড়েছে। ফুটপাতে মানুষের আনাগোনাও বেশি।
গত এক সপ্তাহের তুলনায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলোতে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা কিছুটা বেশি দেখা গেছে। তবে চেকপোস্টে কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। এসব এলাকার মধ্যে চাতরী চৌমুহনী, বন্দর সেন্টার , আনোয়ারা সদর , মালঘর ,বটতলী অন্যতম। এসব এলাকায় ব্যক্তিগত বাহনের পাশাপাশি মানুষের উপস্থিতিও ছিল বেশি। আলাপ করলে তারা জানান, অফিস ও কর্মসংস্থানে যাওয়ার জন্যই তারা বাসা থেকে বের হয়েছেন।
সকালে চাতরী চৌমুহনী , বন্দর সেন্টার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা করে মানুষ নিজের গন্তব্যে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সন্ধ্যায় ও ছিলো এই সব এলাকায় কর্মজীবীদের পদচারণা । পরিবহন সংকটে ভুগান্তিতে পড়তে হয়েছে অনেককে।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে গ্রেফতার ও জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়া জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিচয়পত্র দেখিয়ে তারা তাদের গন্তব্যে বা কর্মস্থলে যেতে পারছেন।
গত এক সপ্তাহে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘুরা ঘুরি , সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া সড়কে গাড়ী বের করা, মোটরসাইকেলে ২ জন আরোহী বহন , মাস্ক ব্যবহার না করা , নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দোকান পাট খোলায় ৭৬ টি মামলায় মোট ৫৫ হাজার নয়’শত টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
অষ্টম দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। মোবাইল কোটে ৫টি মামলায় ৪হাজার দুইশত টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
আনোয়ারা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক মাইকিং ও পথচারীদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়। এসময় বেশ কিছু নারী ও শিশু পথচারীকে মাস্কবিহীন চলাচল করায় তাদেরকে মুখে মাস্ক পরিয়ে দেয়া হয় বলে জানা আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম দিদারুল ইসলাম।
বিধিনিষেধের শুরুতে প্রথম দিন ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সমগ্র উপজেলা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও লগডাউন বাস্তবায়নে মাইকিং করা হয় , জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযৌক্তিক কারণে বাইরে বের হওয়ায় ও গাড়ি নিয়ে ঘুরাঘুরি , দোকান পাট খোলায় উপজেলায় দ্বিতীয় দিন ১০টি মামলায় ৪হাজার ৫০০ টাকা এবং তৃতীয় দিনে ২২ মামলায় সাড়ে ১৬ হাজার টাকা, চতুর্থ দিনে ১০ মামলায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা, পঞ্চম দিনে ২৬ মামলায় ১৫ হাজার ২০০ টাকা , ৬ষ্ঠ দিনে ৬ টি মামলায় ৫ হাজার টাকা ও সপ্তম দিনে ২টি মামলায় ২ হাজার ২০০ টাকা অর্থদণ্ড করে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সপ্তাহ জুড়ে লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়,উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানবীর হাসান চৌধুরী’র সাথে তিনি বলেন,করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে ১লা জুলাই থেকে আজব্দি মাঠে রয়েছি আমরা। প্রয়োজন ছাড়াই মানুষজন অযথা ঘুরে বেড়াচ্ছে। জোর করে তাদের লগডাউন পালন করাতে হচ্ছে। এবং যারা এই ধরণের প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান,খুব অল্প সংখ্যক মানুষই প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে এছাড়া বেশির ভাগই নানান অজুহাতে অযথা ঘুরে বেড়াই। এবং অনেক দোকানি লগডাউন অমান্য করে দোকান খোলা রাখার চেষ্টা করতেছে। তবে এসব লগডাউন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি।
উল্লেখ্য যে,করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লগডাউন আরো ১সপ্তাহ বৃদ্ধি করে আগামী ১৪ জুলাই মঙ্গলবার পর্যন্ত করা হয়েছে।