রিয়াদ হোসেন, আনোয়ারা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের দক্ষিণ খুরুশকুল গ্রামের আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সড়কের বেহাল দশা।
সড়কটি বাস্তবায়নের দীর্ঘ ১২ বছর পার হলেও কোন সংস্কারের ছোঁয়া পাইনি। দেখার যেন কেউ নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার ও জনপ্রতিনিধিদের স্বদিচ্ছার অভাবে খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়ে গ্রামীণ সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যে কারণে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবারের মানুষকে।
এ সড়ক দিয়ে জুঁইদন্ডী, খুরুশকুল, সরেঙ্গা গ্রামসহ আশপাশ এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ জেলা ও উপজেলা সদর ও হাটবাজারে যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম খুরুশকুল গ্রামবাসীর যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই সড়ক।
বর্তমানে সড়কটি দেখলে আঁতকে উঠবে যে কেউ! গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলাও। এসব প্রতি দিনকার চিত্র হলেও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কোন মাথাব্যথা নেই। ফলে , স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সংস্কারের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই সড়কে।
পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। অল্প বৃষ্টি আর জোরের সময় হাঁটু সমান পানিতে থৈ থৈ করে সড়কের দুইপাশ।
প্রতিনিয়তই ঘটছে কোনো না কোনো দূর্ঘটনা। বিশেষ করে অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী ও হাসপাতালে রোগীদের আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ সড়কটি এখন নিজেই রোগী! বিকল্প সড়ক না থাকাতে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহনও।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গাজী শাহ্ জামে মসজিদ থেকে খুরুশকুল সেন্টার পর্যন্ত রাস্তাটি বিলীন হয়ে সড়কের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। অপরদিকে দর্জি পুকুর হতে গাজী শাহ্ জামে মসজিদ পর্যন্ত এলাকায় বিছানো ইট উঠে গিয়ে কাদায় পরিণত হয়েছে। ওই অংশের কয়েক স্থানে ভেঙে গেছে সড়ক। যার কারণে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও ডেলিভারি রোগীকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এবং কোন গাড়ি না যাওয়াতে কৃষকেরা আধুনিক চাষাবাদ থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছে।বিকল্প সড়ক না থাকাতে ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ।
জানা যায়, উপজেলার জুঁইদন্ডী দর্জি পুকুর হতে খুরুশকুল সেন্টার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কটির উন্নয়ন কাজ হয় ২০০০ সালের দিকে। সেবার সড়কটির ৫০০ মিটার অংশে মাটি ভরাটের কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস।
২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে সড়কটির ওই অংশে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইট বিছানো হয়। পরে সড়কটির নামকরণ করা হয় তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে। দীর্ঘ একযুগে ধরে শুধু মাত্র মাটি ভরাট ছাড়া আর কোন সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীদের বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্বেও সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকায় এলাকাবাসীর মাঝে হতাশ বিরাজ করছে।
জুঁইদন্ডি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, এই রাস্তায় এর জন্য ভূমিমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। তিনবছর আগে তদারকি জন্য ইন্জিনিয়ারসহ আসছিলো। সড়কের বেশকিছু জায়গায় বড় বড় খানাখন্দ ছিলো আর বেশ কিছু জায়গায় ভাঙ্গা ছিলো। মাটি ভরাটের জন্য চেয়ারম্যানকে বলা হলেও তিনি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও কাজ করেন নি। চলতি বাজেটে নতুন করে প্রকল্প আসলে আবার আবেদন করবো।
আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাফুজ বলেন, আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সড়কের টেন্ডার ফাইল এলজিইডি অফিসে পাঠানো হয়েছে। সম্ভাব্য চলতি অর্থবছরের এর বাজেট আসতে পারে।
এই বিষয়ে ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোরশেদুর রহমান চৌধুরী বলেন, আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সড়কের ব্যাপারে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন বরাদ্দ নেই। সংস্কারের জন্য ও কোন বরাদ্দ আসে নাই। নতুন করে সংস্কার আবেদন করা তো আমাদের দায়িত্ব না। চট্টগ্রাম নিউজ এর প্রতিবেদক থেকে সড়কটি যে বেহাল দশা প্রথম শুনলাম।
এমনে এই সড়কটিতে ২-৩ বছর আগে আমার ব্যক্তিগত ভাবে ইট বিছানো হয়েছিল আর কিছু মাটি ভরাটের কাজ করছিলাম। রাস্তাটি বিলের মাঝখানে হওয়ায় সাধারণ মানুষ জমি থেকে মাটি নিতে বাধা দে। আমিতো পি. এস. সি. না যে আমি কাজ করবো। ইউপি মেম্বাররা পিএসসি সদস্য পদ পাই তারা রাস্তা বাঁধে। মেম্বাররা একবার বড় করে সড়কটিতে মাটি কাজ করছিলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আর আমি দুই একবার রিফারিং করে দিছিলাম। এখন কোন বরাদ্দ নাই ডিসেম্বরে বরাদ্দ পাইলে রাস্তাটার কাজ করবো।
এই বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী তাসলিমা জাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুঁইদন্ডির দক্ষিণ খুরুশকুল আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এই আইডি ভুক্ত সড়ক যদি থেকে থাকে তাহলে মন্ত্রী মহাদয়ের ডিও লেটার মাধ্যমে বাজেটের অনুমোদন আসবে। যদি ডিও লেটার মাধ্যমে পাশ হয় তাহলে কাজ হবে।