মিয়ামি, যুক্তরাষ্ট্র: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাত মাসেরও অধিক সময় ধরে চলা এ অভিযানে মারা হয়েছে ৩৫ হাজারের অধিক লোক। গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে মানবিক সংকট। তবে, এর পরও হামাসকে নির্মূল বা পরাজিত- কোনটিই করতে পারেনি ইসরায়েল। আর তাই, ইসরায়েল গাজায় ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ অর্জন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে খোদ বাইডেন প্রশাসনেই। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে গাজায় বিজয়ের তত্ত্ব কী তা বুঝতেও কার্যত সংগ্রাম করছে যুক্তরাষ্ট্র। সংবাদ রয়টার্সের
ফিলিস্তিনি উপত্যকা গাজায় হামাসকে পরাজিত করে ইসরায়েল ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ অর্জন করবে বলে তেমন কোন সম্ভাবনা বাইডেন প্রশাসন দেখছে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ট ক্যাম্পবেল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা শাসনের জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছেন, তার পরও ক্যাম্পবেলের এ মন্তব্য বাইডেন প্রশাসন তথা শীর্ষ স্থানীয় যুক্তরাষ্ট্রের কোন কর্মকর্তার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পরিষ্কার স্বীকারোক্তি যে, ইসরায়েলের বর্তমান সামরিক কৌশল এমন ফলাফল আনবে না যে লক্ষ্যে তারা যুদ্ধ করছে।
সোমবার (১৩ মে) যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে ন্যাটো ইয়ুথ সামিটে ক্যাম্পবেল বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে, আমরা বিজয়ের তত্ত্ব কী, তা নিয়ে সংগ্রাম করছি। কখনো কখনো আমরা যখন ইসরায়েলি নেতাদের কাছ থেকে শুনি, তারা বেশিরভাগ সময়ই… যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক বিজয়, সম্পূর্ণ বিজয়ের ধারণা সম্পর্কে কথা বলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে, আমরা বিশ্বাস করি, তেমন কিছুর (সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন) সম্ভাবনা আছে বা তেমন কোন কিছু সম্ভব। এবং এটি অনেকটা সেই পরিস্থিতির মতই দেখায় যেখানে আমরা ৯/১১’-এর পরে (আফগানিস্তান ও ইরাকে) নিজেদের পেয়েছি।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বার বার হামাসের বিরুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নিরলস আক্রমণে ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। বর্বর ইসরায়েলি আগ্রাসনে ঘনবসতিপূর্ণ ক্ষুদ্র এ ভূখণ্ডটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া, ক্যাম্পবেল এমন এক সময়ে এ মন্তব্য করলেন, যখন গাজা উপত্যকার দক্ষিণতম শহর রাফাহতে বড় ধরনের কোন সামরিক আক্রমণ না করার জন্য ইসরায়েলকে সতর্ক করছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ইসরায়েলের হামলায় এরই মধ্যে বাস্তুচ্যুত হওয়া দশ লাখেরও বেশি মানুষ এ শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ও ইরাকে আক্রমণের পর যে পুনরাবৃত্তিমূলক বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিল, গাজার পরিস্থিতির সাথে সেটির তুলনা করে ক্যাম্পবেল বলেন, ‘এ ধরনের সংকটের রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, রাজনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা আররো বেশি হওয়া উচিত। বহু দেশ এমন একটি রাজনৈতিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে চায়, যেখানে ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে আরো সম্মান করা হবে।’
এর এক দিন পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও বলেন যে, ‘রাফাহতে ইসরায়েল হামলা চালিয়ে হামাসকে পরাজিত করতে পারবে না।’
বহু বিশ্লেষকও বলছেন, ‘হামাসকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। কারণ, হামাস একটি আদর্শের নাম। আদর্শকে অস্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।’