রসালো ফলের ডালি সাজিয়ে চলছে বাঙালির ‘মধুমাস’। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে রসালো ফলের ঘ্রাণ। কাঁচা-পাকা আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, আনারসের মৌ মৌ গন্ধ এখন দেশের হাট-বাজারগুলোর চারপাশে ।
ধীরে ধীরে আনোয়ারা উপজেলার হাটবাজারগুলো ভরপুর হচ্ছে মৌসুমি ফলে। প্রতিদিনই বাজারে নিত্যনতুন ফল আসতে শুরু করেছে ।এতে দিনে-দিনে ফলের প্রতি মানুষের চাহিদাও বাড়ছে।
প্রকৃতির তাপে-গরমে হাঁসফাঁস অবস্থার মাঝেও রসনা তৃপ্ত করতে সন্ধ্যা বা রাতে বাড়ি ফেরার পথে উচ্চবিত্ত পরিবারের গৃহকর্তা ঠিকই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এসব বাহারি মৌসুমী ফল। ঐতিহ্য মেনে আবার কেউ কেউ প্রিয়জনের বাসায় থলে ভর্তি করে ফল পাঠাচ্ছেন। তবে চড়া দামের এসব ফল নিন্ম আয়ের মানুষের এখনো চেখে দেখার সামর্থ্য হয়নি।
উপজেলার চাতুরী চৌমুহনী বাজার,রুস্তম হাট, জয়কালি বাজার,মালঘর বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাজারেই গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফলের সমারোহ। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, কাঁঠাল, আম, আনারস,জাম ইত্যাদি।এসব ফলের গন্ধ সুবাস ছড়িয়ে মাতিয়ে তুলছে সকল পথচারীদের। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফলের মধ্যে বর্তমানে বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে লিচু, আনারস, আম। এছাড়া নগরীর প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়ও ভ্যানে করে মৌসুমী ফল বিক্রি করছেন অনেকে। বাজারগুলো থেকে কিছুটা কম দামেই ফল বিক্রি হচ্ছে ভ্যানের ভ্রাম্যমাণ
দোকানগুলোতে।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ফলের দাম দেখা যায়, প্রতি শত লিচু বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০টাকা করে,আনারস জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে, কাঠাল বিক্রি হচ্ছে সাইজ অনুযায়ী প্রতি ফিস ৬০ থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা পর্যন্ত,আম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৯০ টাকা করে, আপেল ১৫০ টাকা , আনার ২৫০টাকা ,নাকফল ২৩০টাকা করে ।এছাড়াও মাল্টা,জাম এসব বিক্রি হচ্ছে ১১০/১২০ টাকা করে।
সরজমিনে উপজেলা প্রাণকেন্দ্র চাতুরী চৌমুহনী বাজার ও জয়কালি ঘুরে দেখা যায়,বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমী ফল বিক্রিতে। তারা মূলদোকানের সামনের অংশে মৌসুমী ফল রেখে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এ বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে লিচু। এছাড়া হিমসাগর, লেংড়াসহ বিভিন্ন জাতের আমও শোভা পাচ্ছে ফল দোকান গুলোতে। দেখা যায় ট্রাকে করে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনারসসহ বিভিন্ন দেশীয় ফল আমদানি করতেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ফল বাজারের বেশির ভাগ অংশ থাকবে কাঁঠাল, মিষ্টি ও রসালো আম আর আনারাসের দখলে।
তাছাড়া বিভিন্নজাতের কলা, দেশীয় ফল জামরুল আর অল্পবিস্তর তরমুজের দেখা মিলেছে বাজারে।
ফলের বাজার ও মূল্য প্রসঙ্গে জয়কালি বাজারের ফলের অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী মোঃ ইলিয়াস বলেন, আরও ১ সপ্তাহ পর সব ধরনের ভালো ভালো ফল আসা শুরু করবে। এখন বেশিরভাগ লিচু ও আমের চাহিদা রয়েছে বাজারে। দাম মোটামুটি ক্রেতাদের হাতের নাগালে, সাধ্যের ভিতরেই রয়েছে। গরম আর বৃষ্টি বেশি থাকায় কাঁঠালের তেমন কোনো চাহিদা নেই বলে জানান তিনি।
ফল কিনতে আসা রহিম নামের এক ক্রেতা জানাই,মৌসুমের শুরু হিসেবে সব কিছুর দাম একটু বেশি। বাজারে ভরপুর মৌসুমী ফল থাকলেও দাম চড়া। তবে প্রশাসনের উচিত নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা। যাতে সকল শ্রেণির ক্রেতারা এসব মৌসুমী ফল কিনতে পারে। পাশাপাশি ভোক্তাদের ফরমালিন মুক্ত ফল কেনা নিশ্চিত করতে বাজারে অভিযান পরিচালনা করতে অনুরোধ জানান প্রশাসনকে।
চাতরী চৌমুহনী বাজারে ফল ব্যবসায়ী ইকবাল জানান, বাজারে এখন আম ও লিচু বেশি চান ক্রেতারা। আমের থেকেও লিচু আর আনারস বেশি বিক্রি হচ্ছে। লগডাউনে গাড়ী ভাড়া বেশি হওয়ায় অন্যান্য জায়গা থেকে মাল আনতে খরচ হয়েছে বেশি। সব খরচ বাদ দিলে খুবই সীমিত লাভ থাকে লিচুতে। এবার লিচুর ফলন কম হওয়ায় চাহিদা খুব বেশিই। ক্রেতাদের চাহিদা যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ফরমালিনমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিং এর বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, মূলত সরাসরি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ( BSFA) থেকে এই সমস্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে কোনো কারখানা বা গোডাউনে ফলে ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে এই মর্মে কোনো অভিযোগ বা তথ্য পাওয়া গেলে আমরা ওই কারখানা বা গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফল আনার সময় ওইসব ফল গুলো চেক করেই আনা হয়।